চীনা বাণিজ্যমন্ত্রীর প্রতি প্রধান উপদেষ্টার প্রশংসা: “আপনার কথা আমার কানে গানের মতো বাজছে”

বাংলাদেশে সফররত চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও (Wang Wentao)–কে উদ্দেশ করে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) বলেছেন, “আপনার কথা আমার কানে গানের মতো বাজছে।” সোমবার (২ জুন) ঢাকার স্টেট গেস্ট হাউস যমুনা (State Guest House Jamuna)-য় এক সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এই মন্তব্য করেন।

চীন-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারে বৈঠক

ওয়াং ওয়েনতাও “চীন–বাংলাদেশ বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্মেলন ২০২৫”-এ অংশ নিতে বাংলাদেশে আসেন। এ উপলক্ষে তিনি উচ্চপর্যায়ের চীনা ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের একটি প্রতিনিধি দল সঙ্গে নিয়ে সফরে আসেন। সম্মেলনের পর তিনি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।

প্রধান উপদেষ্টা এই সফরকে “গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ” উল্লেখ করে বলেন, “আপনার সঙ্গে এত বিশাল বিনিয়োগকারী দল এবং আপনার প্রাণবন্ত উপস্থাপনা আমাদের আপ্লুত করেছে।”

কৃষি, পাট ও মেরিন খাতে চীনের আগ্রহ

বৈঠকে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “চীন বাংলাদেশের বাণিজ্য, কৃষি, পাট, মেরিন ফিশারিজ ও গবেষণা খাতে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।” তিনি আরও জানান, গ্রামীণ উন্নয়নে চীনের কারিগরি সহযোগিতা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

এদিকে, ড. ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। সঠিক উদ্যোগ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা পেলে প্রতিটি গ্রামকে উৎপাদনকেন্দ্রে পরিণত করা সম্ভব।” তিনি পাট, জলজ সম্পদ ও কৃষি উন্নয়নে যৌথ গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ওয়েনতাও বলেন, “জমি উন্নয়ন, পানি সংরক্ষণ ও আধুনিক রোপণ প্রযুক্তিতে আমরা বাংলাদেশের পাশে থাকতে চাই। কৃষিকে আমরা শুধু শিল্প নয়, সামাজিক সংগঠন হিসেবেও দেখি।”

মেরিন ফিশারিজ ও পাট শিল্পেও সম্ভাবনা

চীনের মন্ত্রী জানান, গভীর সমুদ্র মাছ ধরার প্রযুক্তিতে চীন বিশ্বে অগ্রণী এবং বাংলাদেশ যদি প্রস্তাব দেয়, তবে তারা তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।

ড. ইউনূস পাট শিল্পের প্রসঙ্গ তুললে ওয়েনতাও জানান, বর্তমানে চীন বছরে ১০ কোটি মার্কিন ডলারের পাট বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে, যা বাংলাদেশের মোট পাট রপ্তানির প্রায় ১০%। তিনি বলেন, “যৌথ গবেষণা ও পণ্যে বৈচিত্র্য আনলে এই পরিমাণ আরও কয়েকগুণ বাড়ানো সম্ভব।”

চীনা মন্ত্রী আরও বলেন, “আমাদের সহযোগিতা শুধু ব্যবসায় সীমাবদ্ধ থাকবে না, গবেষণার ক্ষেত্রেও বিস্তৃত হবে। আমরা চাই, বাংলাদেশের গবেষকরাও এতে অংশ নিক।”

প্রধান উপদেষ্টা এসময় তার সাম্প্রতিক চীন সফরের স্মৃতিচারণ করেন এবং বলেন, “আপনার সফর আমাদের সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।”