কাশ্মীরের পহেলগাম অঞ্চলে সাম্প্রতিক অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন ভারতীয় যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন ভারতীয় সেনাপ্রধান অনিল চৌহান (General Anil Chauhan)। এই মন্তব্যের পর থেকেই চরম রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়েছে নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) নেতৃত্বাধীন মোদি সরকার (Modi Government)।
চৌহানের স্বীকারোক্তি: “হ্যাঁ, ধ্বংস হয়েছে একটি যুদ্ধবিমান”
সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত সাংগ্রিলা ডায়লগে ব্লুমবার্গ টিভি (Bloomberg TV)–কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান বলেন, পাকিস্তানি হামলায় ভারতের একটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে। যদিও তিনি ছয়টি বিমান ধ্বংসের পাকিস্তানি দাবি নাকচ করেন।
তিনি বলেন, “সংখ্যা নয়, বরং কেন ধ্বংস হলো তা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আমাদের কৌশলগত ভুল বুঝে নিয়েছি এবং দ্রুতই তা শুধরে নিয়েছি।”
গোপনীয়তার অভিযোগে বিরোধীদের সমালোচনা
সেনাপ্রধানের এই বক্তব্য সামনে আসার পর থেকেই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের কঠোর সমালোচনা শুরু করে। তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য সাগরিকা ঘোষ (Sagarika Ghosh) প্রশ্ন তোলেন, “বিদেশি মিডিয়ার বদলে ভারতীয় সংসদ বা জনগণ কেন আগে জানবে না?”
কংগ্রেস (Congress) সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে (Mallikarjun Kharge) বলেন, “এটা পার্লামেন্টে খোলামেলা আলোচনা হওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী সংহতির বদলে আত্মপ্রশংসা করছেন, যা এখন অনুচিত।”
যুদ্ধবিরতি ও মধ্যস্থতা নিয়ে প্রশ্ন
বিরোধীরা জানতে চায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)–এর মধ্যস্থতায় কি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়েছিল? এ বিষয়ে ব্লুমবার্গের প্রশ্নে সেনাপ্রধান সরাসরি কোনো উত্তর দেননি।
পাকিস্তানের দাবি ও প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তান (Pakistan) দাবি করে, তাদের হামলায় ভারতের অন্তত ছয়টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে। এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন চৌহান। তবে ইমরান খানের সরকার এই ঘটনার ওপর বিস্তারিত তদন্ত চায় বলে জানা গেছে।
কংগ্রেসের আরও দাবি
কংগ্রেস একটি স্বাধীন বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে—যেটি কারগিল রিভিউ কমিটির আদলে ভারতের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন করবে। তারা প্রশ্ন তোলে, পাকিস্তান পর্যন্ত যদি সংসদ বসিয়ে আলোচনা করতে পারে, তাহলে ভারত পারবে না কেন?
মোদি সরকারের ‘আত্মপ্রশংসামূলক প্রচারণা’ নিয়ে ক্ষোভ
খাড়গে বলেন, “যদি সেনাবাহিনীকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে মোদি বারবার বক্তৃতায় আত্মপ্রশংসা করছেন কেন? এখনই নির্বাচনী প্রচারণা নয়, বরং জাতীয় সংহতি দরকার।”
এই মন্তব্যে বিজেপি-বিরোধী রাজনীতিতে উত্তেজনা বাড়ছে। বিশেষ করে নিরাপত্তা ও যুদ্ধের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুতে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে ঐক্যের বদলে মুখোমুখি অবস্থান গভীর রাজনৈতিক সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।