স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় প্রমাণে বাধ্য হলেন আপেল মাহমুদ

আপেল মাহমুদ (Apel Mahmud)—স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কিংবদন্তি কণ্ঠ, একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশপ্রেমিক শিল্পী, যিনি গেয়েছেন ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি’—তাঁকে স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর প্রমাণ করতে হলো, তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা (Freedom Fighter)।

সম্প্রতি একজন ব্যক্তি জামুকা (JAMUKA)-তে আপেল মাহমুদের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় নিয়ে আপত্তি জানান। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সোমবার (২ জুন) কুমিল্লার সার্কিট হাউসে (Cumilla) অনুষ্ঠিত শুনানিতে হাজির হয়ে কাগজপত্র ও সাক্ষ্য উপস্থাপন করেন তিনি।

যুদ্ধের স্মৃতিচারণ

মেঘনা উপজেলার বাসিন্দা আপেল মাহমুদ জানান, ১৯৭১ সালে ক্যাপ্টেন মতিউর রহমানের কমান্ডে নরসিংদী ও পরে আশুগঞ্জ, ভৈরব, হবিগঞ্জ, চুনারুঘাট, তেলিয়াপাড়া টি স্টেট এলাকায় যুদ্ধ করেছেন। আহত অবস্থায় তিনি আগরতলা হয়ে কলকাতায় যান এবং আবদুল জব্বার (Abdul Jabbar) এর সঙ্গে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কাজে যুক্ত হন।

জামুকার সিদ্ধান্ত

জামুকা মহাপরিচালক শাহিনা খাতুন (Shahina Khatun) বলেন, “আপেল মাহমুদ যথাযথভাবে প্রমাণ করেছেন যে তিনি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। তাই তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত।”

তিনি জানান, কুমিল্লা জেলায় মোট ৩১ মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, যার মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে শুনানি এদিন অনুষ্ঠিত হয়।

কষ্ট ও ক্ষোভের প্রকাশ

আপেল মাহমুদ বলেন, “জীবিত অবস্থায় আমাকে আবার প্রমাণ করতে হলো আমি মুক্তিযোদ্ধা। এটা অত্যন্ত কষ্টদায়ক।”

অভিযোগকারী মনোয়ার হোসেন (Monowar Hossain) সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমি তার কোনো ক্ষতি করিনি। কেন তিনি এমন করলেন জানি না।”

পাশে ছিলেন সহযোদ্ধারা

শুনানিতে তাঁর পাশে ছিলেন সহধর্মিণী নাসরিন মাহমুদ (Nasrin Mahmud), বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোরঞ্জন ঘোষাল (Monoranjan Ghoshal), আশরাফুল আলম (Ashraful Alam), জাহাঙ্গীর হায়াত খান (Jahangir Hayat Khan) এবং সুভাষ সাহা (Subhash Saha)।

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার (Amirul Kayser) জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুধুমাত্র শুনানির স্থান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।

শিল্পের অবদান

গান, সংগীত ও সাহসিকতার মেলবন্ধনে আপেল মাহমুদ বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন চিরস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। ২০০৫ সালে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন। তাঁর গাওয়া ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর’সহ বহু গান আজও মানুষের হৃদয়ে বাজে।