জাতীয় ঐকমত্য কমিশন (National Consensus Commission)–এর সহসভাপতি ড. আলী রীয়াজ (Ali Riaz) জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা ও চুক্তির ভিত্তিতে অবস্থানগত পরিবর্তন ঘটছে।
আলোচনার কাঠামো ও উদ্দেশ্য
মঙ্গলবার সকালে ফরেন সার্ভিস একাডেমি (Foreign Service Academy)–তে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বের প্রথম আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা একেক দিন তিন চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে এই তিনটা বা চারটা বিষয়ে এক জায়গায় আসা। সেটা সবসময় সম্ভব না হলেও, কিছু ক্ষেত্রে একমত হওয়া সম্ভব।”
তিনি জানান, কিছু বিষয় নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলাদা আলাদা আলোচনা হয়েছে এবং আরও কিছু বিষয়ে সামান্য আলোচনা প্রয়োজন রয়েছে। এসব বিষয়ে পারস্পরিক চুক্তিগুলো শোনার পরেই অবস্থানগত পরিবর্তন দেখা দেয়।
আলোচনার ফোকাস ও প্রধান বিষয়
আলী রীয়াজ বলেন, “জুলাই মাসে যে ‘সনদ’ তৈরি করতে চাই, তাতে কোন বিষয় থাকবে বা থাকবে না, সেই সিদ্ধান্ত সময়ের স্বল্পতায় নিতে হবে।” তিনি আরও বলেন, যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে না, তা সনদে উল্লেখ থাকবে এবং যেসব বিষয়ে আলোচনা হলেও ঐকমত্য হয়নি, তা-ও চিহ্নিত করা হবে।
তিনি বলেন, আলোচনার জন্য যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে:
– সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ
– জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষে নারী আসন
– সংসদের স্থায়ী কমিটিগুলো
– তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ও কার্যপরিধির কিছু অংশ
সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব ও আলোচনার অগ্রগতি
সংস্কার কমিশনের সুপারিশ প্রসঙ্গে ড. আলী রীয়াজ বলেন, “সংবিধান ও নির্বাচন সংস্কার কমিশনের মূল প্রস্তাবগুলো কাঠামোগতভাবে কী ছিলো, তা আলোচনার মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত হয়েছে।” তিনি উল্লেখ করেন, পরিবর্তনের জায়গাগুলো চিহ্নিত করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং যেসব জায়গায় ন্যূনতম একমত হওয়া যাচ্ছে, তা স্মরণ রাখা জরুরি।
তিনি আরও বলেন, “সব বিষয়ে একমত না হলেও, যেসব বিষয়ে একমত হচ্ছি, সেই জায়গাগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। আলোচনার ভিত্তিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে, যা জুলাইয়ের সনদে উঠে আসবে।”
বৈঠকে উপস্থিত রাজনৈতিক দল ও প্রতিনিধি
বৈঠকে অংশ নেয় বিএনপি (BNP), জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami), সিপিবি (CPB), বাসদ (BASAD), এলডিপি (LDP), খেলাফত মজলিস (Khelafat Majlish), রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন (State Reform Movement), এবি পার্টি (AB Party), নাগরিক ঐক্য (Nagorik Oikya), জাসদ (JASAD), এনডিএম (NDM), এনসিপি (NCP), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (Bangladesh Khelafat Majlish), গণসংহতি আন্দোলন (Ganosamhati Andolon), জেএসডি (JSD), গণঅধিকার পরিষদ (Gono Odhikar Parishad), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি (Revolutionary Workers Party), জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট (BNP-led Alliance), ১২ দলীয় জোট (12-party Alliance), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (Islami Andolon Bangladesh) এবং গণফোরাম (Gonoforum)।
উপস্থিত কমিশনের সদস্যবৃন্দ
ড. আলী রীয়াজের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক (Justice Md. Emdadul Haque), ড. বদিউল আলম মজুমদার (Badiul Alam Majumdar), মুয়ীদ চৌধুরী (Muid Chowdhury), সফর রাজ হোসেন (Safar Raj Hossain), ড. ইফতেখারুজ্জামান (Dr. Iftekharuzzaman) এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার (Monir Haider)।
অতীত সংলাপ
উল্লেখ্য, এর আগে প্রথম দফার সংলাপ অনুষ্ঠিত হয় ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ মে পর্যন্ত। সে সময় ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করে ঐকমত্য কমিশন।