রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার (Rajshahi Central Jail)–এ বন্দি সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ (Asaduzzaman Asad)কে তার মৃত মায়ের মুখ দেখতে দেওয়া হয় জেল গেটেই। সোমবার (২ জুন) বিকেলে তার মা মারা যান এবং রাত ৯টায় মহিষবাথান কবরস্থানে (Mahishbathan Graveyard) দাফন করা হয়।
প্যারোলে মুক্তি না পেয়ে জেলগেটে শেষ দেখা
মা মারা যাওয়ার পর তার পরিবার রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর প্যারোলে মুক্তির আবেদন করে। তবে তাকে জানাজায় অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। মায়ের মরদেহ কারা ফটকে নিয়ে আসা হয় এবং দূর থেকে শেষবারের মতো তার মুখ দেখেন মি. আসাদ।
এই ঘটনা ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কেন একজন সাবেক সংসদ সদস্যকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে জানাজায় অংশ নিতে দেওয়া হয়নি।
জেলা প্রশাসনের ব্যাখ্যা
রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে কুলসুম শম্পা (Umme Kulsum Shompa) জানান, প্যারোলের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়নি। বরং পরিবারের পক্ষ থেকেই মরদেহ কারা ফটকে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব আসে। তাই সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
তবে স্থানীয় সাংবাদিকদের মতে, নিরাপত্তার কারণেই জানাজায় অংশ নিতে আসাদুজ্জামানকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। আশঙ্কা ছিল, তাকে জানাজায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হলে বিরোধী দলগুলোর প্রতিবাদ ও মব পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও পরিবারিক পটভূমি
আসাদুজ্জামান আসাদ কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের (Awami League) মনোনয়নে দ্বাদশ সংসদে রাজশাহী-৩ আসনের এমপি নির্বাচিত হন। তিনি রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
বর্তমানে তিনি ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ঘটে যাওয়া জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ের একটি মামলায় কারাবন্দি।
তাঁর পরিবারও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তার এক ভাই ছিলেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর। ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে মি. আসাদ বড়। ছোট ভাই মো. আক্তারুজ্জামান রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও নিরাপত্তার কারণে জানাজায় অংশ নেননি।
প্যারোল প্রক্রিয়া ও আইন
বাংলাদেশে প্যারোলে মুক্তির আলাদা কোনো আইন নেই। তবে ২০১৬ সালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (Ministry of Home Affairs)–এর এক বিজ্ঞপ্তিতে এই বিষয়ে নীতিমালা নির্ধারণ করা হয়। এতে বলা হয়—
– নিকটাত্মীয়ের মৃত্যু হলে ১২ ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে
– মুক্তি থাকলেও সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারায় থাকতে হয়
– দুর্গমতা, নিরাপত্তা ও দূরত্বের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে প্যারোল মঞ্জুর বা বাতিল করতে পারে জেলা প্রশাসন
প্রশাসনের বক্তব্যের অসঙ্গতি
যদিও প্রশাসন বলছে প্যারোল বাতিল করা হয়নি, স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছেন, রাতের জানাজায় আনা হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হতো। তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তাজনিত কারণেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল আসাদকে মুক্তি না দেওয়ার।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার মো. শাহ আলম খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মানবিকতা ও প্রশাসনিক বাস্তবতা বিতর্কে
এই ঘটনায় মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি বনাম প্রশাসনিক বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একজন বন্দিকে মা মারা যাওয়ার পর জানাজায় অংশ নেওয়ার সুযোগ না দেওয়া কতটা ন্যায়সঙ্গত ছিল—তা নিয়ে চলছে আলোচনা।