জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ঐকমত্য বৈঠকে বিএনপি ও এনসিপির মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশ নিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তীব্র বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে বিএনপি (BNP) ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizens’ Party – NCP)। সোমবার (২ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমি (Foreign Service Academy)-তে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে নির্বাচনকাল নির্ধারণকে কেন্দ্র করে দুই দলের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়।

আলোচনার মূল উদ্দেশ্য ছিল সংস্কার প্রস্তাব

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস (Chief Adviser Dr. Yunus)-এর নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এ বৈঠক ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপ। মূল উদ্দেশ্য ছিল কমিশনের প্রস্তাবিত সংস্কার বিষয়ে মতবিনিময়। তবে অধিকাংশ সময়জুড়ে আলোচনা ঘুরে পড়ে ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে, ডিসেম্বরেই হবে না কি পরবর্তী বছরে হবে—এই ইস্যুতে।

নেতাদের বক্তব্য ও বিরোধ

বৈঠকে বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সালাহউদ্দিন আহমেদ (Salahuddin Ahmed) এবং এনসিপির পক্ষে নেতৃত্ব দেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (Nahid Islam)।

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘‘বিএনপি ৩১ ডিসেম্বরের এক দিন পরেও নির্বাচন মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। প্রয়োজনীয় সব ধরনের সংস্কার এক মাসেই করা সম্ভব, সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন নেই।’’

জবাবে এনসিপির নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘‘কিছু দল ভারতের সুরে ডিসেম্বরেই নির্বাচন চায়। তাদের বক্তব্য ভারতের বক্তব্যের প্রতিফলন।’’

এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সালাহউদ্দিন পাল্টা বলেন, ‘‘ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইলে যদি ভারতের সুরে কথা বলা হয়, তাহলে যারা নির্বাচন পিছাতে চায়, তারা নিশ্চয়ই যুক্তরাষ্ট্র কিংবা চীনের সুরে কথা বলছে।’’

উত্তপ্ত বিতর্ক ও মতবিরোধ

বৈঠকে উপস্থিত অন্তত ছয়জন অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন, এর পরপরই বিএনপি ও এনসিপির প্রতিনিধিদের মধ্যে তীব্র বিতণ্ডা শুরু হয়। এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজনৈতিক নেতা জানান, ‘‘বৈঠকে মূলত সংস্কার নিয়ে কথা হওয়ার কথা থাকলেও সেটি রূপ নেয় নির্বাচনের সময়কাল নিয়ে বিতর্কে। কিছু ছোট দল কেবল বিএনপির অবস্থান সমর্থনে এসেছে, তাদের নিজের কোনো অবস্থান নেই।’’

অন্য এক দলের নেতা বলেন, ‘‘বিএনপি বড় দল হওয়ায় তাদের এত অনড় হওয়া উচিত নয়। যদি সংস্কার বাস্তবায়নে সময় লাগে, তাহলে জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করাই যুক্তিসঙ্গত।’’

বৈঠক শেষে বক্তব্য

বৈঠক শেষে সালাহউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হওয়া সম্ভব এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার নির্বাহী আদেশেই এক মাসে বাস্তবায়নযোগ্য।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমরা স্পষ্টভাবে আমাদের প্রস্তাব তুলে ধরেছি।’’

অন্যদিকে, এনসিপির নাহিদ বলেন, ‘‘জুলাই সনদের বাস্তবায়নের আগে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা উচিত নয়। আগে তারিখ জানালে তা সংস্কার প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটাবে।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী আইন সংস্কারের দাবি জানিয়েছি। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে এই সংস্কার জরুরি।’’