“সরকার শপথ না পড়ালে আমি নিজেই শপথ নিয়ে মেয়রের চেয়ারে বসব”—ইশরাক হোসেন

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র হিসেবে এখনও শপথ নিতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপি (BNP) নেতা ইশরাক হোসেন (Ishraq Hossain)। মঙ্গলবার (৩ জুন) নগর ভবনের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি ঘোষণা দেন, “সরকার যদি আমাকে শপথ না পড়ায়, আমি নিজেই শহীদ মিনারে শপথ নিয়ে মেয়রের চেয়ারে বসব।”

“বহিরাগত কাউকে নগর ভবনে ঢুকতে দেব না”

ইশরাক হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “কোনো উপদেষ্টা, প্রশাসক কিংবা সরকারি কর্মকর্তাকে নগর ভবনে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।” সচিবালয়ে আগুন লাগার পর থেকে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বসছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “নগর ভবন কিভাবে চলবে, সেটা ঢাকাবাসী নির্ধারণ করবে, সরকার নয়।”

“আদালতের রায়ের পরও শপথ না পড়ানো সংবিধান লঙ্ঘন”

ইশরাক অভিযোগ করেন, “সরকার আদালতের রায়, নির্বাচন কমিশনের গেজেট—কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না। তারা শুধু তালবাহানা করছে। এতে করে সংবিধান, আইন এবং নির্বাচন কমিশনের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “পুরো বাংলাদেশ আমলে নিলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র খুবই সামান্য পদ। অথচ এই পদেও তারা স্বচ্ছতা রাখছে না। তাহলে জাতীয় নির্বাচনে কীভাবে নিরপেক্ষতা আশা করা যায়?”

“পদত্যাগ নাটক করে সরকার ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করেছে”

ইশরাক দাবি করেন, সরকার আন্দোলন ঠেকাতে নাটক করেছে। “আমরা আন্দোলন শুরু করলে তারা নাটক সাজিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেয়। এটা জনগণকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা।”

তিনি আরও বলেন, “রাষ্ট্র চালাতে আবেগ নয়, যুক্তি ও দায়িত্ববোধ দরকার। পদত্যাগের নাটক দেখিয়ে জনগণকে ধোঁকা দেওয়া যায় না।”

“এই নগর ভবন আমরা নিয়ন্ত্রণ করছি”

তিনি দাবি করেন, “গত দুই সপ্তাহ ধরে নগর ভবন আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা চাই নিয়ম মেনে সব হোক, তাই এখনো নিজে শপথ নিইনি। কিন্তু বাধ্য হলে শহীদ মিনারে গিয়ে নিজেই শপথ নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করব।”

ঈদের আগে আন্দোলন শিথিল, ঈদের পর ফের আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

ইদুল আজহা-কে সামনে রেখে নগর ভবন ঘেরাও ও অবস্থান কর্মসূচি সাময়িকভাবে শিথিল করা হচ্ছে বলেও জানান ইশরাক। তবে তিনি হুঁশিয়ার করেন, “ঈদের ছুটির পরও যদি শপথ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি না হয়, তাহলে ঢাকাবাসীকে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”

পরিস্থিতির পটভূমি

২০২০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস বিপুল ভোটে জয়ী হলেও, চলতি বছরের ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে।

২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে। তবে, ১৪ মে একটি রিটের মাধ্যমে ইশরাকের শপথ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেন আইনজীবী মামুনুর রশিদ। হাই কোর্ট ২২ মে আবেদনটি খারিজ করলেও মামুনুর রশিদ আপিল বিভাগে আবেদন করেন।

এই আইনি জটিলতার মধ্যেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এখনো শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান আয়োজন করেনি। সর্বোচ্চ আদালত নির্বাচন কমিশনের নিষ্ক্রিয়তায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছে, “নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেনি।”