আইনের সংস্কারের মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরেকটি স্বৈরাচারী শাসন বা ফ্যাসিবাদী শাসন যাতে গড়ে না ওঠে, সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার—বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল (Dr. Asif Nazrul)।
মঙ্গলবার (৩ জুন) রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট-এ ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর (এমেন্ডমেন্ট) অর্ডিন্যান্স, ২০২৫’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
“স্বৈরশাসক যেন আর ফিরে না আসে”
ড. আসিফ নজরুল বলেন, “আমরা আইন ও বিচার ব্যবস্থার এমন পরিবর্তন চাই, যেন ভবিষ্যতে যদি কেউ স্বেচ্ছাচারী বা ফ্যাসিস্ট শাসন কায়েম করতে চায়, তাহলে সেটা আইনগতভাবে কঠিন হয়ে পড়ে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা এমন আইন করতে চাই যা স্বৈরাচারীদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে।”
তিনি বলেন, “আইন করতে বিস্তর আলোচনা প্রয়োজন। সংসদে একাধিকবার রিভিউ হয়, খসড়া পরিবর্তন হয়। কিন্তু জনস্বার্থে আমরা দ্রুত কাজ করছি, কারণ রাজনৈতিক দলগুলো সচরাচর জনকল্যাণমুখী আইন প্রণয়নে আগ্রহী নয়।”
“সমালোচকদের মানসিকতারও সংস্কার প্রয়োজন”
সরকারি আইনের দ্রুত সংস্কার নিয়ে কেউ কেউ সমালোচনা করছেন—এমন প্রসঙ্গে ড. নজরুল বলেন, “অনেকেই প্রশ্ন করছেন—সংস্কার কোথায়? আবার কেউ বলছেন—কেন এত দ্রুত? আমি বলব, যাঁরা এমন প্রশ্ন তোলেন, তাদের মানসিকতারও সংস্কার দরকার।”
তিনি দাবি করেন, সরকারের প্রণীত সাইবার নিরাপত্তা আইন সংশোধন নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রশংসা করেছে।
“সরকারের বিরুদ্ধে এখন সমালোচনার অবারিত স্বাধীনতা”
ড. আসিফ নজরুল বলেন, “পূর্বের তুলনায় এখন সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা করার অনেক বেশি স্বাধীনতা রয়েছে। এটিও আমাদের একটি বড় সংস্কার।”
মামলাজট নিরসনে নতুন উদ্যোগ
তিনি বলেন, “লিগ্যাল সার্ভিস অ্যাক্টে বড় পরিবর্তনের চিন্তা করছি। পেটি অফেন্স, আপোষযোগ্য মামলা, পারিবারিক মামলা কিংবা এনআই অ্যাক্ট সংক্রান্ত মামলা আগে লিগ্যাল এইডে যেতে হবে, কোর্টে নয়।”
মতবিনিময় সভায় বক্তাদের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন:
- অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান – গ্রেফতার ব্যক্তির মেডিকেল পরীক্ষার দায়িত্ব কাদের হবে তা নির্ধারণের প্রস্তাব
- আইজিপি বাহারুল আলম – প্রথমবারের মতো পুলিশের প্রতিনিধি যুক্ত করায় ধন্যবাদ
- ড. মাহবুবুর রহমান – ম্যাজিস্ট্রেটের বিচারিক ক্ষমতা বাড়ানোর সঙ্গে লোকবল বাড়ানোর প্রস্তাব
- ব্যারিস্টার সারা হোসেন – বেত্রাঘাতের বিধান বাতিলের প্রশংসা, ২৫ বছরের সংস্কার বাস্তবায়নের প্রত্যাশা
- চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম – ঔপনিবেশিক ধারার বিলুপ্তির দাবি
বক্তারা আরও বলেন:
– পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আলাদা সংজ্ঞা দিতে হবে
– প্লী বার্গেইনিংয়ের যৌক্তিকতা বিবেচনা করতে হবে
– কনডেম সেলে প্রেরণ যেন সাজা ঘোষণার আগেই না হয়
– মামলাজট নিরসনে আপোষযোগ্য অপরাধের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন
“আরও আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সংশোধন হবে”
সমাপনী বক্তব্যে ড. আসিফ নজরুল বলেন, “এই মতামতগুলো আরও গভীরভাবে আলোচনা করে বাস্তবায়নযোগ্য অংশগুলোকে আইনের খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।”