ভবিষ্যৎ সরকারের জন্য ১৮০ দিনের রোডম্যাপ ঘোষণা করলো বিএনপি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (Bangladesh Nationalist Party) আগামী ভবিষ্যৎ সরকারের জন্য একটি ১৮০ দিনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। বুধবার (৪ জুন) দলটির গুলশান (Gulshan) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী (Amir Khasru Mahmud Chowdhury) এ পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন।

নির্বাচনের আগেই রোডম্যাপ পরিকল্পনা

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নির্বাচনের আগেই ভবিষ্যৎ সরকার গঠনের পর প্রথম ১৮০ দিনের জন্য বিএনপির পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি একটি অ্যাকশন-ওরিয়েন্টেড রোডম্যাপ, যার মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে দ্রুত সংস্কার ও উন্নয়ন কার্যক্রম চালু করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এই সংস্কৃতি বিশ্বের অনেক গণতান্ত্রিক দেশে প্রচলিত থাকলেও বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বিএনপি এটি শুরু করছে বলে দাবি করে দলটি।

খাতভিত্তিক পরিকল্পনা

**শিক্ষা
– প্রাথমিক শিক্ষকদের মর্যাদা ও প্রশিক্ষণ
– শিক্ষাক্রমে বাস্তবমুখী বিষয় অন্তর্ভুক্ত
– ট্রেড কোর্স চালু
– ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতা
– ইনোভেশন গ্র্যান্টের মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরি

স্বাস্থ্য:
– টিকাদান, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সচেতনতা
– স্পেশালাইজড ট্রেনিং
– নিরাপদ পানির জন্য পরিশোধন ব্যবস্থা
– বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে রিজার্ভার নির্মাণ

নারীর ক্ষমতায়ন:
– ‘ফ্যামিলি কার্ড’ চালু
– লাঞ্ছিত নারীদের জন্য সাপোর্ট সেল
– ক্ষুদ্র ঋণ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মনির্ভরতা
– নারী নিরাপত্তায় কঠোর ব্যবস্থা

শহীদের স্বীকৃতি:
– জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের শহীদের সম্মাননা
– আহতদের পুনর্বাসন ও চাকরির সহায়তা

কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন:
– ‘ফার্মার্স কার্ড’ চালু
– উৎপাদিত পণ্য সরাসরি ক্রয় ও কোল্ড স্টোরেজ
– কৃষিপণ্য রপ্তানি
– ডাটাবেজ ও টার্গেটেড পলিসি
– সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
– খাল খনন, পানি ব্যবস্থাপনা
– ডিজিটাল প্রযুক্তি ও জনশক্তি রপ্তানি

শিল্প খাত:
– ১ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির লক্ষ্যমাত্রা
– FDI বৃদ্ধি
– ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’
– বন্ধ হওয়া শিল্প প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু

তথ্যপ্রযুক্তি:
– প্রোডাকশন ফ্যাসিলিটি ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম
– ফেসবুক-গুগল অফিস খোলা
– পেপাল ও পেমেন্ট মেথড চালু
– ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ

প্রবাসী কল্যাণ:
– মর্যাদাসম্পন্ন প্রবাসী জীবন নিশ্চিতকরণ
– দূতাবাসের কার্যকারিতা বাড়ানো
– ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফেয়ার
– দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির জন্য প্রশিক্ষণ

নগর ব্যবস্থাপনা:
– নারীদের জন্য নির্দিষ্ট বাস সার্ভিস
– ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় এআই এবং কড়াকড়ি আইন প্রয়োগ

পরিবেশ:
– ৩০ কোটি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি
– ইউনিয়ন ও থানা পর্যায়ে সবুজায়ন
– পলিথিন নিষিদ্ধ করে পাটজাত ব্যাগ উৎসাহ

আইন-শৃঙ্খলা:
– জিরো টলারেন্স নীতি
– পুলিশকে প্রশিক্ষণ ও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা

অর্থনৈতিক কৌশল ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা

ঋণ ব্যবস্থাপনা:
– এমটিডিএস প্রণয়ন
– স্বল্পমেয়াদি ঋণ নির্ভরতা হ্রাস
– রোলওভার ঝুঁকি কমানো
– ঋণ-উন্নয়ন-বিনিময় কৌশল

রাজস্ব:
– এনবিআর বাতিল করে নতুন ‘বাংলাদেশ কর ও শুল্ক কমিশন’
– কর কোড আধুনিকায়ন
– ডিজিটাল পেমেন্ট ও নজরদারি
– কার্বন কর ও গ্রিন ট্যাক্স
– ট্রান্সফার প্রাইসিং আইন কঠোরীকরণ

বাজেট প্রক্রিয়ার সংস্কার

সংবিধান অনুযায়ী বাজেট অনুমোদন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। সংসদীয় কমিটি শক্তিশালী করা, জনঅংশগ্রহণ বাড়ানো এবং নির্বাচনপূর্ব কেয়ারটেকার সরকার সংক্রান্ত স্পষ্ট গাইডলাইন প্রণয়ন করার কথাও জানানো হয়।