[এনসিপি’র নতুন আর্থিক ও তহবিল নীতিমালা প্রকাশ: স্বচ্ছতা ও জনসম্পৃক্ততার ওপর জোর]

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) (National Citizen Party (NCP)) তাদের নতুন আর্থিক ও তহবিল পরিচালনা নীতিমালা প্রকাশ করেছে, যেখানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও নৈতিকতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

রাজধানীতে আজ বুধবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ নীতিমালা প্রকাশ করেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (Nahid Islam)। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিস্তারিত গণমাধ্যমে জানানো হয়।

মূল উদ্দেশ্য ও কাঠামো

নীতিমালার মূল লক্ষ্য হলো দলের প্রতিটি টাকার উৎস ও ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং তা আইনি ও নৈতিক কাঠামোর মধ্যে রাখা। দলের অর্থনীতি হবে শৃঙ্খলাবদ্ধ, অডিটযোগ্য এবং কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অর্থের ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করা হবে। নীতিমালা অনুসারে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (Representation of the People Order), বাংলাদেশ ব্যাংক (Bangladesh Bank) ও নির্বাচন কমিশন (Election Commission) এর সকল বিধিমালা মেনে চলা হবে।

তহবিলের উৎস

নীতিমালায় দলীয় আয়ের বিস্তারিত উৎসও তুলে ধরা হয়েছে:

  • মাসিক সদস্য ফি: রশিদ, মোবাইল পেমেন্ট বা ব্যাংকের মাধ্যমে সদস্যরা চাঁদা দিতে পারবেন।
  • গণ-অনুদান কর্মসূচি: ‘১০০ টাকা ক্যাম্পেইন’ এবং ‘ছোট দান, বড় স্বপ্ন’ শীর্ষক কার্যক্রমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ছোট ছোট অনুদান সংগ্রহ করা হবে।
  • দলীয় আয়: টি-শার্ট, বই, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও অনলাইন কোর্স বিক্রি করে আয়।
  • অনলাইন গণচাঁদা: এনসিপির ওয়েবসাইটে (www.ncpbd.org/funding-policy.pdf) দেশের ও প্রবাসীদের জন্য ডিজিটাল রসিদযুক্ত অনুদানের সুযোগ থাকবে।
  • কর্পোরেট অনুদান: নিরপেক্ষ যাচাই সাপেক্ষে শুধুমাত্র বৈধ ও নৈতিক উৎস থেকেই অনুদান গ্রহণ করা হবে।

তবে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে— কোনো রকম কালো টাকা, অপরিচিত উৎস, বিদেশি সরকার বা অপরাধ সংশ্লিষ্ট তহবিল গ্রহণ করা হবে না।

স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে পদক্ষেপসমূহ

নীতিমালায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে একাধিক প্রযুক্তিনির্ভর ও প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ:

  • প্রতিটি অনুদানে স্বয়ংক্রিয় রসিদ ও ইউনিক আইডি থাকবে
  • ৫ হাজার টাকার বেশি দানে পরিচয় দলীয়ভাবে সংরক্ষণযোগ্য হলেও গোপন থাকবে
  • সব লেনদেন গুগল শিট বা সফটওয়্যারে রেকর্ড করা হবে
  • তৃণমূলের জন্য পুনর্বণ্টন কাঠামো
  • বাজেট অনুমোদন ছাড়া ব্যয় নিষিদ্ধ; ৬টি অগ্রাধিকার ধাপ মানতে হবে
  • জোরপূর্বক অর্থ সংগ্রহ নিষিদ্ধ
  • হুইসেলব্লোয়ার পলিসি অনুসারে যেকেউ অনৈতিক অর্থ লেনদেন রিপোর্ট করতে পারবেন

এনসিপি’র কেন্দ্রীয় অর্থ ও বাজেট কমিটি

দলের অর্থ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা তদারকির জন্য একটি ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠিত হবে, যার নেতৃত্ব দেবেন কোষাধ্যক্ষ। সদস্যরা আইটি, অডিট, ব্যাংকিং, আইন এবং প্রবাসী প্রতিনিধিদের মধ্যে থেকে নির্বাচিত হবেন।

কমিটির মূল দায়িত্ব:

  • বাজেট প্রস্তুত ও অনুমোদন
  • তহবিল সংগ্রহের কৌশল নির্ধারণ (QR কোড, ইভেন্ট ফান্ডরেইজিং ইত্যাদি)
  • অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক অডিট তদারকি
  • জরুরি প্রয়োজনে কোষাধ্যক্ষের ৫০ লাখ টাকার ব্যয় অনুমোদনের ক্ষমতা
  • প্রতি ছয় মাস অন্তর আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ
  • ৫ কোটি টাকার বেশি লেনদেনে পূর্ণ নিরীক্ষা বাধ্যতামূলক

কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তদন্ত করবে দলের শৃঙ্খলা কমিটি।

পূর্ণকালীন কর্মীদের জন্য ভাতা ও বোনাস কাঠামো

পূর্ণকালীন রাজনৈতিক কর্মীদের জন্য নির্ধারিত ভাতা ও ফেলোশিপ প্রোগ্রাম চালু করার কথা নীতিমালায় জানানো হয়েছে। কর্মীদের অভিজ্ঞতা ও দায়িত্ব অনুসারে চারটি স্তরে শ্রেণিবিন্যাস করা হবে এবং অঞ্চলভেদে জীবনযাত্রার ব্যয়ের ভিত্তিতে ভাতা নির্ধারণ হবে।

নৈতিক ও স্বচ্ছ সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি

এই নীতিমালার মাধ্যমে এনসিপি এক নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির সূচনা করতে চায়—যেখানে দলীয় রাজনীতি হবে জনসম্পৃক্ত, তথ্যভিত্তিক এবং আর্থিকভাবে নৈতিক।