বগুড়ায় শরিয়াহভিত্তিক উচ্চ মুনাফার নামে ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ, লাপাত্তা সাবেক শিবিরনেতা

বগুড়া (Bogra) শহরে শরিয়াহভিত্তিক অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ইসলামী ছাত্রশিবির (Islami Chhatra Shibir)-এর সাবেক নেতা আমিরুজ্জামান পিন্টু (Amiruzzaman Pintu)-এর বিরুদ্ধে। তিনি ‘রেইনবো মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি’ (Rainbow Multipurpose Cooperative Society)সহ একাধিক প্রতিষ্ঠান খুলে বিনিয়োগকারীদের টাকা আত্মসাৎ করেন।

প্রতারণার কৌশল ও প্রতিষ্ঠান

পিন্টু, যিনি পূর্বে ফারইস্ট ইসলামী ইন্স্যুরেন্সে কর্মরত ছিলেন, এক যুগ আগে গালাপট্টি এলাকায় ‘রেইনবো’ ব্র্যান্ডে একাধিক প্রতিষ্ঠান চালু করেন, যার মধ্যে রয়েছে রেইনবো হোমস (Rainbow Homes), রেইনবো কৃষি উন্নয়ন সংস্থা (Rainbow Krishi Unnayan Sangstha) এবং রেইনবো হাসপাতাল (Rainbow Hospital)। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শরিয়াহভিত্তিক মুনাফার প্রলোভনে বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর (Jamaat-e-Islami) নেতাকর্মীদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন তিনি।

ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা

বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ (Bogra Government Azizul Haque College)-এর অবসরপ্রাপ্ত সহযোগী অধ্যাপক ফজলুর রহমান (Fazlur Rahman) জানান, পিন্টু তাঁর ছাত্র ছিলেন। তাঁর প্রলোভনে পড়ে তিনি ২০১৬ সাল থেকে মোট ৯০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন, যার মধ্যে মাত্র ৭ লাখ টাকা ফেরত পেয়েছেন। বাকি ৮৩ লাখ টাকা পাওনা থাকলেও পিন্টু ও তাঁর সহযোগী হামিদুল হক তোতা (Hamidul Haque Tota) তা ফেরত দিচ্ছেন না।

খোঁজে গিয়ে ব্যর্থতা ও প্রশাসনের অবস্থান

ভুক্তভোগীরা পিন্টুর বাড়ি ও রেইনবো হাসপাতাল ঘেরাও করলেও তাঁকে খুঁজে পাননি। বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তিনি টাকা ফেরত দেননি। সর্বশেষ ২ জুন নির্ধারিত তারিখেও তিনি আত্মগোপনে থাকেন। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন যে থানায় কিংবা র‌্যাবের কাছে গেলে কোনো সহযোগিতা মেলেনি।

বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির (OC Hasan Basir) জানান, ভুক্তভোগীদের মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তবে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কেউ মামলা করেননি। মামলা হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জামায়াতের অবস্থান

বগুড়া শহর জামায়াতে ইসলামীর আমির আবিদুর রহমান সেহেল (Abidur Rahman Sehel) বলেন, পিন্টুর সঙ্গে তাদের দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি নব্বইয়ের দশকে ছাত্রশিবিরে ছিলেন, কিন্তু পরে রাজনীতি থেকে সরে যান। তিনি জানান, দল থেকে এ ধরনের সমিতি ও এনজিও থেকে দূরে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

ভুক্তভোগীরা সরকারের কাছে কঠোর হস্তক্ষেপ ও প্রতিকার দাবি করছেন এবং প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নেবেন বলে জানিয়েছেন।