ভুয়া তথ্য রুখতে প্রয়োজন ২০০ সদস্যের টিম: প্রেস সচিব শফিকুল আলম

প্রেস সচিব শফিকুল আলম (Shafiqur Alam) তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে বাংলাদেশ (Bangladesh)ের সাংবাদিকতা জগতে ভুয়া তথ্য ও তথ্য বিকৃতির ক্রমবর্ধমান প্রবণতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এত বেশি ভুয়া তথ্য প্রতিদিন ছড়ায় যে এসব প্রতিরোধে অন্তত ২০০ জনের একটি বিশেষায়িত টিম প্রয়োজন।

সংবাদমাধ্যমে অনিয়ম ও গাফিলতির অভিযোগ

প্রেস সচিব অভিযোগ করেন, দেশের নামকরা পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলগুলো প্রায়ই ভুল তথ্য প্রচার করে এবং কোনো ধরনের ব্যাখা বা সংশোধনী ছাড়া প্রতিবেদন সরিয়ে নেয়। তিনি বলেন, “শেখ মুজিবুর রহমান ও স্বাধীনতার চার বীর সেনানীর মুক্তিযোদ্ধা মর্যাদা নিয়ে ভুয়া খবর ছড়িয়েছে, অথচ ব্যাখা দেওয়ার পরও তা সরাতে দেরি করে অনেক মিডিয়া, অনেকে তো ক্ষমাও চাননি।”

এই ধরনের ভুল প্রতিবেদন ভারতের সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার (Interim Government)’ বিরোধী ‘রিভিশনিস্ট’ এজেন্ডা ছড়ানোর অভিযোগ উস্কে দেয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ভুল অনুবাদে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “একটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম জাতিসংঘের কূটনীতিকের ‘মানবিক করিডোর’ সম্পর্কিত বক্তব্য ভুল অনুবাদ করে। এতে সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং রাজনীতিবিদরা সরকারের ব্যাখ্যা দাবি করেন।”

তিনি উল্লেখ করেন, “আমি রাত ১২টার পর DW বাংলা (DW Bangla)-কে ব্যক্তিগতভাবে ফোন করে অনুরোধ করি যেন তারা অনুবাদ সংশোধন করে। কিন্তু তারা শুরুতে কোনো ব্যাখাই দেয়নি, শুধু প্রতিবেদনটি সরিয়ে নেয়।”

ভুয়া তথ্যের ভয়াবহ প্রভাব

শফিকুল আলম বলেন, “২০১৭ সালের রোহিঙ্গা গণহত্যা (Rohingya Genocide) এবং ২০০৯ সালের বিডিআর হত্যাকাণ্ড (BDR Mutiny)-এর পেছনেও ভুয়া খবর বড় ভূমিকা রেখেছিল। গবেষকদের মতে, ‘ডাল-ভাত’ প্রকল্প নিয়ে ছড়ানো গুজব বিডিআর হত্যাকাণ্ডকে উসকে দিয়েছিল।”

আন্তর্জাতিক দৃষ্টান্ত ও দেশের বাস্তবতা

তিনি বলেন, “মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজ (Fox News) ভুয়া নির্বাচনী তথ্য প্রচার করে ৭৮৭.৫ মিলিয়ন ডলার জরিমানা দিয়েছে। ব্রিটেনে সংবাদপত্রগুলো নিয়মিত মানহানির মামলায় দণ্ডিত হয়।” কিন্তু বাংলাদেশের জনপ্রিয় টিভি ভাষ্যকাররা যাচাই না করেই মিথ্যা ছড়ালেও শাস্তির অভাবে কেউ দায় স্বীকার করে না।

শেষে শফিকুল আলম বলেন, “যখন ভুলের কোনো পরিণতি থাকে না, তখন সত্য যাচাইয়ের প্রেরণাও থাকে না।” তিনি সতর্ক করে বলেন, দেশের গণতন্ত্র, নীতিনৈতিকতা ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য।