আসামে ‘বিদেশি’ হিসেবে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া ১৪৫ জন এখনও নিখোঁজ, ফিরেছেন অনেকেই

ভারতের আসাম রাজ্যে ‘বিদেশি’ বলে চিহ্নিত করে শত শত মানুষকে আটক এবং কিছু বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ঘটনায় তৈরি হয়েছে মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সংক্রান্ত বিতর্ক। বিবিসি বাংলার (BBC Bangla) সরেজমিন প্রতিবেদন বলছে, প্রায় ৩০০ জন আটক হওয়ার মধ্যে ১৪৫ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন, যদিও অন্তত ১৫০ জনকে আবার ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

কাশ্মীর থেকে শুরু, আসাম পর্যন্ত অভিযান

২২ এপ্রিল কাশ্মীরে একটি হত্যাকাণ্ডের পর ভারতজুড়ে শুরু হয় ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ শনাক্ত অভিযানে। প্রথমে গুজরাট (Gujarat) এবং পরে রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি ও শেষে আসাম (Assam)–সহ একাধিক রাজ্যে হয় অভিযান।

গুজরাটে সাড়ে ছয় হাজার আটক হলেও মাত্র ৪৫০ জনকে বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। অন্যত্র অনেকেই কাগজপত্র দেখিয়ে প্রমাণ করেছেন তারা ভারতীয়। কিন্তু আসামে আটকদের অনেকেই আগে থেকেই ‘ডিক্লেয়ার্ড ফরেন ন্যাশনাল’—বিদেশি ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ঘোষিত।

মধ্যরাতে গ্রেফতার, নিখোঁজ ১৪৫ জন

মরিগাঁও (Morigaon), চিরাং (Chirang), গোয়ালপাড়া (Goalpara) জেলার বিভিন্ন গ্রামে গভীর রাতে পুলিশ এসে পুরুষ সদস্যদের ধরে নিয়ে যায়। পরদিন পরিবার জানতেই পারে না আটককৃতদের অবস্থান। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বলা হয়—“পুলিশ সুপার ডেকেছেন”।

ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জানায়, আব্দুল লতিফ, খাইরুল ইসলাম, আতাপ উদ্দিন, শাহা আলি, মুজিবর শেখ সহ অনেকে নিখোঁজ। পরে কুড়িগ্রাম সীমান্তে ‘নো-ম্যানস ল্যান্ডে’ তাদের দেখা যায়।

‘ডাইরেক্ট বাংলাদেশে’—ভিডিও ভাইরাল

একটি ভিডিওতে দেখা যায় ১৪ জন নারী-পুরুষ বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় বসে আছেন, বলছেন তারা আসামের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে খাইরুল ইসলামআব্দুল লতিফ আছেন বলে চিহ্নিত হন।

ভিডিও ভাইরালের পর পরিবার ও মানবাধিকার সংস্থার দাবির মুখে কয়েকজনকে ফিরিয়ে আনা হয়। সিটিজেন্স ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস জানিয়েছে, অন্তত ১৫০ জন ফিরে এসেছেন, তবে ১৪৫ জন এখনও নিখোঁজ।

আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীদের বক্তব্য

হাফিজ রশিদ চৌধুরী (Hafiz Rashid Choudhury)—গুয়াহাটি হাইকোর্টের আইনজীবী বলছেন, “আপিল চলমান থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এ এক ধরনের হ্যারাসমেন্ট।”

পারিজাত নন্দ ঘোষ (Parijat Nanda Ghosh) বলেন, “এটা পুশ-ব্যাক না, পুশ-আউট। কারণ ভারতীয়দেরই দেশ থেকে বাইরে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।”

প্রশাসনের বক্তব্য

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা (Himanta Biswa Sarma) জানান, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ডিক্লেয়ার্ড ফরেনারদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। কেউ আপিল না করলে তাদের পুশ-ব্যাক করা হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “চিহ্নিতকরণ এবং পুশব্যাক একসঙ্গে চলবে।”

প্রশ্নের মুখে নাগরিকত্ব প্রমাণের প্রক্রিয়া

অধিকাংশ পরিবার দাবি করছে, ভুল বানান, অনুপস্থিত নথির কারণে বহু মানুষ ‘বিদেশি’ ঘোষিত হয়েছেন। আপিল করার পরও তাদের ‘পুশ-ব্যাক’ করা আইনসঙ্গত নয়। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারও এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি না করায় প্রশ্ন উঠছে কীভাবে তাদের ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।