মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বাণিজ্য বন্ধের আহ্বান মহিউদ্দিন আহমদের

‘৫৪ বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধ ব্যবসা যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়’—এই মন্তব্য করে লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ (Mohiuddin Ahmed) ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনা করেছেন। বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে নিজের লেখা বই ‘এই দেশে একদিন যুদ্ধ হয়েছিল’ বইয়ের একটি ছবি সংযুক্ত করে তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে স্ট্যাটাসটি দেন।

স্বীকৃতি না পাওয়া প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে বক্তব্য

স্ট্যাটাসে মহিউদ্দিন আহমদ লিখেছেন, ‘‘অনেক সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি। আমিও তাদের একজন। আমি একাত্তরের ৩১ জুলাই অস্ত্র হাতে দেশে ঢুকেছিলাম। অথচ ডিসেম্বরের ১৬ তারিখের পরে ভারত থেকে আসা লোকেরা রাইফেল হাতে পোজ দিয়ে ছবি তুলে দিব্যি মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও ভাতা নিচ্ছে।’’ তিনি আরও লেখেন, ‘‘একটা সার্টিফিকেটের জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হবে—এটা কল্পনাও করিনি।’’

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দুঃশাসনের অভিযোগ

মহিউদ্দিন আহমদ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘‘অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বছরের পর বছর গরিবের ট্যাক্সের টাকায় পেনশন নিচ্ছে। কয়েক বছর পরপর সরকার বদল হয় আর দলীয় বিবেচনায় মুক্তিযোদ্ধার তালিকা বদলায়। এটা বন্ধ হওয়া উচিত।’’

প্রস্তাব: মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বিলুপ্তির আহ্বান

স্ট্যাটাসে তিনি তিনটি প্রস্তাব দেন:

  1. মুক্তিযোদ্ধা ভাতা অবিলম্বে বন্ধ করুন—কারণ এই ভাতার গন্ধেই ধান্দাবাজেরা জুটেছে।

  2. জামুকা (JAMUKA) ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় বিলুপ্ত করুন—এই সংস্থাগুলো টাকা খেয়ে অনেককে মিথ্যা মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছে।

  3. মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট (Muktijoddha Welfare Trust) ভেঙে দিন—এই ট্রাস্ট দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠেছে; ট্রাস্টের অধীনস্থ সব বাণিজ্যিক স্থাপনা নিলামে বিক্রির দাবি জানান তিনি।

যুদ্ধ ছিল বিবেকের তাড়নায়, ব্যবসার জন্য নয়

মহিউদ্দিন আহমদ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, ‘‘আমাদের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করেছি বিবেকের তাড়নায়, ব্যক্তিগত লাভের জন্য নয়। যারা ভাতা-পদোন্নতির জন্য যুদ্ধ করে, তারা ভাড়াটে যোদ্ধা। ৫৪ বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধ ব্যবসা যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়।’’