কালুরঘাট সেতু (Kalurghat Bridge)–তে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত দুই বছর বয়সী শিশু মেহেরিমা নূর আয়েশাকে নিয়ে বাবার শোকবিহ্বল পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে হৃদয়বিদারক আলোড়ন তুলেছে। নিহত শিশুর বাবা সাজ্জাদুন নূর (Sazzadun Noor) শুক্রবার (৬ জুন) সকালে ফেসবুক (Facebook)–এ লেখেন, “যে ট্রেন আমার মেয়ের এত পছন্দ, আজ সেই ট্রেন মেয়েকে কেড়ে নিল। আমার সোনামণি এখন আল্লাহর জিম্মায়। সবাই আমার সোনামণির জন্য দোয়া করবেন।”
দুর্ঘটনার বিবরণ
বৃহস্পতিবার রাতে ঈদের ছুটিতে চট্টগ্রাম (Chattogram) শহরের বহদ্দারহাট (Bahaddarhat) এলাকা থেকে সিএনজি অটোরিকশাযোগে বোয়ালখালী উপজেলার পূর্বগোমদণ্ডী গ্রামে যাচ্ছিলেন সাজ্জাদুন, তাঁর স্ত্রী জুবাইয়া ইসরা (Zubaeya Isra) এবং শিশু মেয়ে আয়েশা। কিন্তু পথে কক্সবাজার (Cox’s Bazar) থেকে ছেড়ে আসা পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন কালুরঘাট সেতুর ওপর সিএনজি অটোরিকশাটিকে সজোরে ধাক্কা দিলে আয়েশা নিহত হয়।
ঘটনার সময় শিশু আয়েশার নিথর দেহ কোলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার বাবা। পরে এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে আয়েশাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
বাবার আহাজারি ও ভিডিও
হাসপাতালে ধারণকৃত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সাজ্জাদুন বারবার বলছেন—
“আমার মেয়েটা কী দোষ করেছে? আমি হয়তো গুনাহ করেছি, আমার ৩০ বছর বয়স হয়েছে। কিন্তু দুই বছরের বাচ্চাটা কী করেছে? সে শুধু পানি খেতে চেয়েছিল, তাই বোতল কিনেছি। এখন সব শেষ।”
আরও প্রাণহানি ও আহত
এই ঘটনায় শুধু আয়েশাই নয়, প্রাণ হারিয়েছেন অটোরিকশা চালক তুষার এবং আরও একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি। গুরুতর আহত হন আরও তিনজন।
প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য ও সিগন্যাল ইস্যু
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ট্রেন চলাচলের আগে সিগন্যাল দেওয়া হলেও তখনও সেতুর ওপর যানবাহন ছিল। রাত ১০টা ১০ মিনিটে পর্যটক এক্সপ্রেস সেতুতে প্রবেশ করে এবং সিএনজি, মোটরসাইকেলসহ একাধিক যানবাহনকে ধাক্কা দেয়।
রেল কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা ও ব্যবস্থা
জানালিহাট স্টেশন (Janalihut Station)–এর স্টেশন মাস্টার মো. নেজাম উদ্দিন জানান, সেতুতে একটি গাড়ি নষ্ট হওয়ায় যানজট সৃষ্টি হয়েছিল। তিনি বলেন, “আমরা লাল সিগন্যাল দিয়েছি এবং গার্ড লাল পতাকা দেখিয়েছেন, কিন্তু ট্রেনচালক তা উপেক্ষা করেন।”
তিনি আরও বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী, ট্রেন পূর্বপ্রান্তে দাঁড়িয়ে লাইনম্যানের সংকেত পাওয়ার পর সেতুতে উঠবে। কিন্তু চালক নিয়ম না মেনে সরাসরি দ্রুতগতিতে সেতুতে উঠে যান।”
তদন্ত কমিটি গঠন ও বরখাস্ত
রেল মন্ত্রণালয় (Ministry of Railways) এই ঘটনায় চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে লোকোমাস্টারসহ চার রেলকর্মীকে।