লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতার মৃত্যুকে ঘিরে বিএনপি নেতারা তোপের মুখে

লক্ষ্মীপুর জেলার বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়ন-এর রাজিবপুর এলাকায় প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর (Bangladesh Jamaat-e-Islami) স্থানীয় নেতা মাওলানা কাউছার আহমেদ মিলন (৬০)। শুক্রবার (৬ জুন) তার জানাজা শেষে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জামায়াত নেতাকর্মীরা।

পূর্ব বিরোধের জেরে হামলা, এরপর মৃত্যু

নিহত কাউছার আহমেদ রাজিবপুর এলাকার বাসিন্দা এবং বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়ন জামায়াতের ওলামা বিভাগের ১ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি। তিনি স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে তার ভাই আলতাফ হোসেন আরজুর সঙ্গে একই এলাকার রিয়াজ হোসেন বাবলু ও সোহাগদের মারামারি হয়। এ সময় কাউছারসহ পরিবারের চারজন আহত হন।

বিকেলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। পরিবারের দাবি, রিয়াজদের হামলার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।

জানাজায় বিএনপি নেতাদের তোপের মুখে

শুক্রবার জানাজা শেষে উপস্থিত বিএনপি (BNP) নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম এবং জেলা সেক্রেটারি ফারুক হোসাইন নুরনবী। বিএনপির পক্ষ থেকে ছিলেন জেলা সদস্য সচিব সাহাবুদ্দিন সাবু ও যুগ্ম আহ্বায়ক হাসিবুর রহমান।

জানাজা শেষে জামায়াত কর্মীরা হত্যাকারীদের দলে রাখা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং বিচারের দাবিতে স্লোগান দিয়ে মিছিল করেন।

রাজনৈতিক মতানৈক্য ও বক্তব্য

জামায়াত নেতাদের দাবি, এ হত্যাকাণ্ডে রাজনৈতিক যোগসূত্র রয়েছে। ড. রেজাউল করিম বলেন, “যারা হত্যা করেছে তারা কোনো রাজনৈতিক দলের হতে পারে না, তারা সন্ত্রাসী। তাদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি চাই।”

অন্যদিকে, বিএনপি নেতা হাসিবুর রহমান বলেন, “ঘটনাটি স্থানীয় বিরোধ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। আমরা শুনেছি, নিহত ব্যক্তি আগে দুইবার স্ট্রোক করেছিলেন। এটি রাজনৈতিক ইস্যু নয়, তবে আমরা সুষ্ঠু তদন্ত চাই।”

পরিবারের ভাষ্য ও স্থানীয় পরিস্থিতি

কাউছারের স্বজনরা জানিয়েছেন, মারধরের ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর তিনি মারা যান। অভিযুক্ত রিয়াজ দাবি করেন, “আমার সঙ্গে কাউছারের কোনো বিরোধ ছিল না। তিনি স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে শুনেছি।”

জামায়াত আমিরের প্রতিক্রিয়া

জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান (Dr. Shafiqur Rahman) তার ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে লেখেন, “লক্ষ্মীপুরে ইমাম মাওলানা কাউছার হোসেন মিলনের হত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করুন। সন্ত্রাসী যে দলেরই হোক, সে যেন কোনোভাবেই রেহাই না পায়।”

তিনি নিহতের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জানান।

তদন্ত চলছে

সদর মডেল থানা (Sadar Model Police Station)–এর অফিসার ইনচার্জ আবদুল মোন্নাফ জানান, এখনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের (Laxmipur Sadar Hospital) আরএমও ডা. অরুপ পাল বলেন, “ময়নাতদন্ত হয়েছে। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে প্রতিবেদন প্রয়োজন।”