যুক্তরাজ্য (United Kingdom) সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রাজনীতিক টিউলিপ সিদ্দিক (Tulip Siddiq) নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus) এর সাথে সাক্ষাৎ চেয়ে চিঠি পাঠালেও তার কোনো সাড়া মেলেনি বলে কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে।
সাক্ষাতের চিঠির প্রতি ড. ইউনূসের নির্লিপ্ততা
ঢাকা ও লন্ডনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, টিউলিপের পাঠানো চিঠিকে আমলে নিচ্ছে না বর্তমান প্রশাসন। ফলে যুক্তরাজ্য সফররত প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাচ্ছেন না তিনি।
সোমবার সন্ধ্যায় সরকারি সফরে ঢাকা ত্যাগ করেন ড. ইউনূস। সফরকালে তিনি রাজা চার্লস (King Charles) এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার (Keir Starmer)–এর সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে।
হাস্যরস ও বিতর্ক: টিউলিপের চিঠি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
টিউলিপের খালা শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)–র সঙ্গে তাকে জড়িয়ে ওঠা নানা বিতর্কের প্রেক্ষিতে তার এই সাক্ষাৎ প্রস্তাব নিয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক মহলে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে।
টিউলিপ লিখেছেন, একটি বৈঠকের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশন (Anti-Corruption Commission) কর্তৃক তৈরি হওয়া ‘ভুল বোঝাবুঝি’ দূর করার আশায় তিনি ড. ইউনূসের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান। পাশাপাশি, তিনি তার খালার নাম উঠে আসা নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে চান।
দুর্নীতির অভিযোগ ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
গার্ডিয়ান পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপ সিদ্দিক চিঠিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে, তার বাংলাদেশের কোনো সম্পত্তি বা ব্যবসায়িক স্বার্থ নেই। তবে, তার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ (Awami League) সরকারের পতনের পর টিউলিপের খালা শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান এবং এরপর থেকে শেখ পরিবার (Sheikh Family)–এর বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসতে থাকে।
বিশেষ করে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র (Rooppur Nuclear Power Plant)–এ হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা হয়।
টিউলিপ এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে পূর্বাচলে ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দের অনিয়মসহ ফ্ল্যাট উপহারের অভিযোগে ঢাকা (Dhaka)–র আদালত গত ১৩ এপ্রিল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। সেই তালিকায় রয়েছেন শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা (Sheikh Rehana), রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি (Radwan Mujib Siddiq Bobby) এবং আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী (Azmira Siddiq Ruponti)।
পদত্যাগ ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
লন্ডনে ৭ লাখ পাউন্ড মূল্যের একটি ফ্ল্যাট আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ এক ডেভেলপারের কাছ থেকে ‘উপহার’ পাওয়ার অভিযোগ ওঠার পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে টিউলিপ নগরমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
এরপর কনজারভেটিভ পার্টি (Conservative Party)–র একজন মুখপাত্র তার সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগের দাবি জানান।
প্লট দুর্নীতির মামলার পর ১৫ এপ্রিল টিউলিপের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন, যেখানে অভিযোগ রয়েছে গুলশানের একটি প্লট অবৈধভাবে হস্তান্তর করে ‘ঘুষ’ হিসেবে ফ্ল্যাট গ্রহণের।
মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারের মুখোমুখি হাসিনা
টিউলিপের খালা শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সম্প্রতি তার অনুপস্থিতিতে বিচার শুরু হয়েছে। ওই সময়েই টিউলিপের বিরুদ্ধে অবৈধ সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ প্রবল হয়।