অন্তর্বর্তী সরকার (Caretaker Government)–এর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)–এর বিষয়ে প্রথমদিকে কঠোর অবস্থানে থাকলেও, বিএনপি (BNP) সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে। দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া (Khaleda Zia)–র সরাসরি হস্তক্ষেপে এই পরিবর্তন এসেছে বলে দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে।
খালেদা জিয়ার পরামর্শে সংঘাত এড়াতে চায় বিএনপি
৭ জুন ঈদের রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিনিয়র নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি তাদের পরামর্শ দেন যেন সরকারের বিরুদ্ধে সংঘাতে না যায় দল। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “সরকারের সঙ্গে সংঘাতে গেলে বিএনপির কোনো লাভ নেই।”
এই পরামর্শের প্রেক্ষিতে ৯ জুন রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ড. ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমান (Tarique Rahman)–এর আসন্ন বৈঠকের বিষয়েও আলোচনা হয়। বৈঠকে খালেদা জিয়ার মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে আগের কঠোর অবস্থান থেকে দলটি সরে আসবে।
লন্ডনে ইউনূস-তারেক বৈঠক: সম্ভাব্য রাজনৈতিক মোড়
বিশ্বস্ত সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, আগামী শুক্রবার ১৩ জুন লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ বৈঠকের সময় ও স্থান প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকেই নির্ধারিত হয়েছে।
এই বৈঠককে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সম্ভাব্য একটি বড় মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে। বৈঠকে নির্বাচনের রোডম্যাপ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে।
নির্বাচন নিয়ে মতভেদ ও পরিবর্তনশীল অবস্থান
৬ জুন ঈদের আগের দিন জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা জানান, “জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধের যেকোনো দিনে অনুষ্ঠিত হবে।” এরপরই বিএনপি আপত্তি জানায় যে এপ্রিলের আবহাওয়া ও রমজান মাসে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা কঠিন হবে। তারা দাবি করে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না করার পেছনে কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
এরপর এই ইস্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনার সূত্রপাত হয়। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারপক্ষের সঙ্গে একাধিক দফায় আলোচনা হয়, যার ফলস্বরূপ তারেক রহমান ও ড. ইউনূসের বৈঠক চূড়ান্ত হয়।
ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফর ও আন্তর্জাতিক তৎপরতা
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস সোমবার (৯ জুন) চার দিনের সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে ঢাকা (Dhaka) ত্যাগ করেন। সফরে তিনি রাজা তৃতীয় চার্লস (King Charles III)–এর সঙ্গে বাকিংহাম প্যালেসে সাক্ষাৎ করবেন এবং তার কাছ থেকে ‘কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করবেন।
এছাড়াও, প্রধান উপদেষ্টা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার (Keir Starmer)–এর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন এবং নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউস (Chatham House) আয়োজিত এক সংলাপে অংশ নেবেন। আগামী ১৪ জুন দেশে ফেরার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার।
রাজনৈতিক ভবিষ্যতের পথে নতুন সম্ভাবনা
বিএনপি এবং প্রধান উপদেষ্টার এই উচ্চপর্যায়ের আলোচনার সম্ভাব্য ফলাফল রাজনৈতিক অস্থিরতা হ্রাস এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ সুগম করতে ভূমিকা রাখবে কিনা, তা নিয়েই এখন রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনা চলছে।