এবি পার্টি (AB Party)–র মহাসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ (Asaduzzaman Fuad) এক বেসরকারি টেলিভিশনের টক শো-তে অংশ নিয়ে বলেন, বাংলাদেশের মূল সমস্যা দ্বৈত নাগরিকত্ব নয়, বরং রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট এবং সুশাসনের অভাব।
পাসপোর্টের রঙ দিয়ে দেশপ্রেম নির্ধারণ নয়
ফুয়াদ বলেন, গত ১৬-১৭ বছরে প্রতিবছর প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার করে চুরি হয়েছে, কিন্তু এই অর্থ লোপাটকারীরা কি শুধু সবুজ বা লাল পাসপোর্টধারী ছিলেন? তাহলে কেবল পাসপোর্টের রঙ দেখে একজন মানুষের দেশপ্রেম বিচার করা কতটা যৌক্তিক, সে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
শেখ মুজিব ও বাকশাল প্রসঙ্গ
ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, “শেখ মুজিব (Sheikh Mujib) চতুর্থ সংশোধনী ও বাকশাল গঠন করেছিলেন, তার সময় তিনি কোন রঙের পাসপোর্ট ব্যবহার করতেন? সেই প্রশ্ন এখন কেউ তোলে না।” তিনি বলেন, “অনেকে বৈধ বা অবৈধভাবে বিদেশে গিয়ে সেটেল হয়েছেন, ক্যারিয়ার তৈরি করেছেন, তখন সেই নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি। তাহলে আজ কেন?”
খলিলুর রহমানকে কেন্দ্র করে একপাক্ষিক বিতর্ক
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান (Khalilur Rahman)–কে ঘিরে দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তা একপাক্ষিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও অভিযোগ করেন ফুয়াদ। তিনি বলেন, এর আগে তারেক সিদ্দিকী (Tariq Siddiqi) ও অন্যান্য জেনারেলরাও বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণ বা আবাসন সুবিধা ভোগ করেছেন, কিন্তু তাদের নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা হয়নি। অথচ ড. খলিলুর রহমান গণতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন।
গবেষক ও প্রবাসীদের অবদান খাটো না করার আহ্বান
আলী রিয়াজ (Ali Riaz) ও বদরুল আলম মজুমদার (Badarul Alam Majumdar)–এর মতো বিশিষ্ট গবেষকদের অবদান দ্বৈত নাগরিকত্ব ইস্যুর আড়ালে খাটো করা অনুচিত বলেও মন্তব্য করেন ফুয়াদ। তিনি বলেন, চীন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলো প্রবাসীদের দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে যে উদ্যোগ নেয়, বাংলাদেশকেও সেই পথে হাঁটতে হবে।
প্রবাসীদের অবদান, কিন্তু বৈষম্যপূর্ণ আচরণ?
ফুয়াদ প্রশ্ন তোলেন, যখন কোনো প্রবাসী ব্যক্তি বৈধ পথে অর্থ পাঠান, এফডিআই আনেন বা দান করেন, তখন রাষ্ট্র উৎসাহ দেয়। কিন্তু সেই ব্যক্তিই যখন কোনো রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হন, তখন তার নাগরিকত্ব নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। তিনি বলেন, “আপনারা তার কাজ দেখবেন না, শুধু কাগজের রঙ দেখবেন? এটি স্পষ্ট বৈষম্য।”
ভারতীয় মিডিয়ার ভূমিকা ও রাজনৈতিক প্রপাগান্ডা
তিনি অভিযোগ করেন, ভারতীয় গণমাধ্যম (Indian Media) পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের কিছু বিশিষ্ট দ্বৈত নাগরিককে দেশবিরোধী হিসেবে উপস্থাপন করছে। অথচ একই সময়ে সেনাপ্রধানের প্রশংসা করে বলা হয়, তিনি নির্বাচন চান কিন্তু ক্ষমতা চান না। তাহলে প্রশ্ন উঠছে—এই প্রচারণা কার স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে?
সংবিধানের বাস্তবতা ও আইন প্রয়োগে অসঙ্গতি
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকদের সংসদ সদস্য হওয়া নিষিদ্ধ থাকলেও পূর্ববর্তী সরকার আমলে অনেকেই গোপনে সংসদ সদস্য হয়েছেন। “যদি আইন এলাউ করেন, তাহলে বাস্তবেও তার সুযোগ থাকতে হবে,” বলেন তিনি।
আসল পরিচয় কাজ, সততা ও দেশপ্রেম
ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, একজন মানুষের আসল পরিচয় তার কাজ, সততা ও দেশপ্রেমে প্রকাশ পায়। কাগজের রঙ নয়, যোগ্যতা দিয়েই রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব নির্ধারিত হওয়া উচিত। “বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের জ্ঞান ও সম্পদের ব্যবহার বাধাহীন করতে হবে,” বলে মন্তব্য করেন তিনি।