বিদেশি সন্দেহ হলেই বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’: আসামে বিতর্কিত ঘোষণা হিমন্ত বিশ্ব শর্মার

আসাম (Assam) রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himanta Biswa Sarma) ঘোষণা দিয়েছেন, এখন থেকে কোনো ব্যক্তি ‘বিদেশি’ মনে হলে জেলার প্রশাসক (ডিসি) তাকে সরাসরি বাংলাদেশ (Bangladesh) ফেরত পাঠাতে পারবেন। এই সিদ্ধান্তে ফরেনার্স ট্রাইবুনাল বা আদালতের অনুমতির প্রয়োজন হবে না বলে জানান তিনি।

বিধানসভায় বিতর্কিত ঘোষণা

সোমবার (৯ জুন) আসাম বিধানসভার এক বিশেষ অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী শর্মা বলেন, এই সিদ্ধান্ত ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে এবং ১৯৫০ সালের ‘ইমিগ্রান্টস (এক্সপালশন ফ্রম আসাম) অ্যাক্ট’ অনুসারে কার্যকর করা হবে।

তিনি বলেন, “১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পর যারা আসামে এসেছেন, তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া যাবে না। একজন ডিসি যদি মনে করেন কেউ বিদেশি, তাহলে তাকে পুশব্যাক করা হবে, ফরেনার্স ট্রাইবুনালের প্রয়োজন নেই।”

ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার ব্যতিক্রম

হিমন্ত বলেন, ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে যারা আসামে এসেছেন, তারা এই আইনের আওতায় পড়বেন না। কিন্তু যাদের ডিসি বিদেশি মনে করবেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি জানান, ইতিমধ্যে ফরেনার্স ট্রাইবুনাল কর্তৃক বিদেশি ঘোষণা করা ৩৩০ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং এই অভিযান আরও জোরদার করা হবে।

বিরোধীদের তীব্র প্রতিক্রিয়া

বিধানসভায় এই বক্তব্যের পর বিরোধীরা তীব্র আপত্তি জানান। কংগ্রেস (Congress) নেতা জাকির হোসেন সিকদার (Zakir Hossain Sikdar) প্রশ্ন তোলেন, “ডিসি কীভাবে নির্ধারণ করবেন কে বিদেশি?” জবাবে হিমন্ত বলেন, “ডিসি যাকে বিদেশি মনে করবেন, সেটিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।”

এই উত্তরে আরও হইচই শুরু হয়। বিরোধী দলীয় নেতা দেবব্রত শইকিয়া (Debabrata Saikia) বলেন, “এই আইনে ‘পুশব্যাক’ শব্দটির উল্লেখ নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর (S. Jaishankar) সংসদে বলেছেন, কাউকে ফেরত পাঠানোর আগে তার জাতীয়তা নিশ্চিত করতে হবে—এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নীতি।”

১৯৫০ সালের আইন বনাম বর্তমান পদ্ধতি

বর্তমানে আসামে বিদেশি শনাক্তকরণে ফরেনার্স ট্রাইবুনাল (এফটি) ব্যবস্থাই প্রচলিত। সীমান্ত পুলিশ বা ভোটার তালিকায় ‘ডি-ভোটার’ হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এফটি-তে মামলা হয়। তবে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় এই আইনি প্রক্রিয়া বাইপাস করে সরাসরি জেলা প্রশাসকের সিদ্ধান্তে পুশব্যাক করা যাবে।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ২০২৪ সালের অক্টোবরে এক রায়ে জানায়, আসাম চুক্তির ৬(ক) ধারা বৈধ এবং ১৯৫০ সালের বহিষ্কার আইনও প্রযোজ্য। এই রায়ে বলা হয়, কেন্দ্রীয় সরকার বা মনোনীত কর্মকর্তারা জনস্বার্থে কাউকে বহিষ্কার করতে পারবেন।

রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক বিতর্ক

এই সিদ্ধান্ত কার্যকরে আসাম সরকার নতুন করে ১৯৫০ সালের বিতর্কিত আইন প্রয়োগে উদ্যোগ নিচ্ছে, যা নাগরিক অধিকার, জাতীয়তা নির্ধারণের প্রক্রিয়া এবং আইনত ন্যায্যতা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিরোধী নেতারা এটিকে আসামের পুরোনো বাঙালি মুসলিম জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করার একটি নতুন কৌশল বলেও আশঙ্কা করছেন।