বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, বিশ্লেষক ও কলাম লেখক ডা. জাহেদুর রহমান (Dr. Zahedur Rahman) সাম্প্রতিক এক টকশোতে অংশ নিয়ে মন্তব্য করেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus) প্রকাশ্যে বারবার বলেছেন তিনি আওয়ামী লীগ (Awami League)–কে নিষিদ্ধ করবেন না, কিন্তু বাস্তবতা উল্টো দিকে গেছে। বাস্তবে রাজনৈতিক চাপের মুখে পরিস্থিতি এমনভাবে তৈরি হয়েছে, যেখানে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়ে যায়, যা প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
“প্রধান উপদেষ্টা যা বলেননি, সেটিই হলো বাস্তবতা”
ডা. রহমান বলেন, “অনেকেই সমালোচনা করেছিলেন কেন তিনি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করছেন না। কিন্তু তিনি বারবার বলেছেন, তিনি সেটা করবেন না। তারপরও এমন এক চাপ ও আন্দোলন তৈরি হয়েছে, যার ফলে সরকার দলটিকে নিষিদ্ধ করে। যেটি মূলত তিনি চাননি।”
তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, হাসনাত আব্দুল্লাহ (Hasanat Abdullah) একটি দলবল নিয়ে যমুনাতে ১৪৪ ধারা অমান্য করে অবস্থান নেন এবং পরে শাহবাগে ব্লকেড দেন। এই কর্মসূচিতে অনানুষ্ঠানিকভাবে জামায়াত, ছাত্রশিবির (Islami Chhatra Shibir) এবং অন্যান্য ইসলামি সংগঠন অংশ নেয়। ফলে তৈরি হয় চাপ, এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
“আবারও একই কৌশল প্রয়োগ হতে পারে”
তিনি ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “আগামীতে নির্বাচনের তারিখ জানানো হলে, বলা হতে পারে এই কমিশন মানি না। আবার শাহবাগে সমাবেশ হবে। তারপর আবার বলা হবে—‘আমি তো চেয়েছিলাম না, কিন্তু পরিস্থিতি এমন যে নিষিদ্ধ করতে হলো’। ঠিক যেমন আগে বলা হয়েছিল—‘আমি নির্বাচন চেয়েছিলাম, কিন্তু সড়কের পরিস্থিতি…।’”
“সরকার নিজেই স্টেকহোল্ডার নয়, সিদ্ধান্তে দৃঢ়তা নেই”
বাংলাদেশ (Bangladesh) সরকারের গ্রহণযোগ্যতা এবং দৃঢ়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ডা. রহমান বলেন, “সরকার হতে হলে তাকে কার্যকর হতে হবে। এই সরকার নিজেই কোনো স্টেকহোল্ডার না। চাইলে ডিসেম্বরেও নির্বাচন আনতে পারে, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতেও।”
“প্রধান উপদেষ্টার অবস্থান দুই বড় দলের সুরের সঙ্গে মিশে গেছে”
ডা. রহমান বলেন, “আজ প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য বিএনপি এবং অন্য একটি দলের সুরের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে মিল খাচ্ছে। যা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।”
বিএনপির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব?
বিএনপি (BNP) প্রসঙ্গে ডা. রহমান বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বিএনপির প্রতি স্পষ্ট নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “ড. ইউনূস বলেছেন—শুধু একটি দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়। এটি ভুল। বরং এনসিপি বাদে সব দলই ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়।”
তিনি দাবি করেন, প্রধান উপদেষ্টার মন্তব্য বিএনপিকে ব্লেম করার কৌশল। অথচ বিএনপি অনেক সংস্কার মেনে নিয়েই নির্বাচনে যেতে রাজি হয়েছে।
“বিএনপির নেতাদের সঙ্গে দেখা করেননি প্রধান উপদেষ্টা”
তিনি বলেন, “বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের প্রেক্ষিতে দেখা করতে চেয়েছিল, কিন্তু দেখা করেননি। এমনকি ইশরাক হোসেন (Ishraq Hossain) আদালতের রায় পেয়েও মেয়র হতে পারেননি।”
“বিএনপিকে অপমান করতে উপদেষ্টার অপসারণ দাবি অগ্রাহ্য”
ডা. রহমান আরও বলেন, বিএনপি যাদের উপদেষ্টা পদ থেকে অপসারণ চেয়েছিল, তাদের মধ্যে আসিফ মোহাম্মদ সজীব ভূঁইয়া (Asif Mohammad Sajib Bhuiyan) ছিলেন, তবু তাকে রেখেই বিএনপিকে অপমানের মতো আচরণ করা হয়েছে।
সবশেষে তিনি বলেন, “এইসব ঘটনার যোগসূত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, সরকার বিএনপির প্রতি সুস্পষ্টভাবে নেতিবাচক আচরণ করছে। ভবিষ্যতে বিএনপি সরকারকে রাজনৈতিকভাবে তারই প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।”