সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ফিরে প্রমাণ করলেন, তিনি পালিয়ে যাননি: ‘সাজানো নাটক’ বিতর্কে উত্তাল দেশ

সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ (Abdul Hamid) থাইল্যান্ডে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসার পর নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। তার নির্বিঘ্ন বিদেশ যাত্রা ও প্রত্যাবর্তন নিয়ে সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিরোধী দল ও বিশ্লেষকদের মধ্যে নানা ধরনের বক্তব্য উঠে আসছে, যা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ‘সাজানো নাটক’ বিতর্ক।

বিদেশযাত্রা ও তদন্ত কমিটি

গত ৭ মে দিবাগত রাতে আবদুল হামিদ থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ব্যাংকক (Bangkok) যান। অথচ তার এ যাত্রা ছিল অনেকটা গোপন এবং নিয়মানুযায়ী রাষ্ট্রীয় সম্মতি ছাড়া সম্ভব না হওয়া সত্ত্বেও তা ঘটে যায়। পরবর্তীতে কিশোরগঞ্জ (Kishoreganj)ের পুলিশ সুপার হাসান চৌধুরী ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের কর্মকর্তা তাহসিন আরিফকে প্রত্যাহার করা হয়।

এছাড়া আরও দুই পুলিশ কর্মকর্তা—আজহারুল ইসলাম ও সোলেমানকে বরখাস্ত করা হয়। পরে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (Lt Gen (Retd) Jahangir Alam Chowdhury)র ঘোষণায় গঠিত হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি, যার নেতৃত্বে রয়েছেন অধ্যাপক সি আর আবরার (C. R. Abrar)। অন্য সদস্যরা হলেন পরিবেশবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান (Syeda Rizwana Hasan) ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন (Brig. Gen. (Retd.) M Sakhawat Hossain)।

দেশে ফিরে ‘লুঙ্গি পরে’ বিমানবন্দরে

৯ জুন রাত পৌনে ২টায় দেশে ফেরেন আবদুল হামিদ, লুঙ্গি পরে ভিআইপি সুবিধায়। তার সঙ্গে ছিলেন শ্যালক ডা. নওশাদ খান ও ছোট ছেলে রিয়াদ আহমেদ। বিমানবন্দরে তাকে আটক বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি।

আইজিপি বাহারুল আলম (Baharul Alam) বলেন, “তার গ্রেপ্তারের কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই।” স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও বলেন, “দোষী না হলে গ্রেপ্তারের প্রশ্ন ওঠে না।”

“সবই ছিল সাজানো নাটক”—বিশ্লেষক মাসুদ কামাল

সাংবাদিক মাসুদ কামাল (Masud Kamal) বলেন, “আবদুল হামিদের বিদেশ যাত্রা নিয়ে সরকার একটা ‘নাটক’ করেছে। তিনি একজন ক্যানসার রোগী, তার বিদেশ যাওয়া-আসা সম্পর্কে সরকার সব জানে। মূল উদ্দেশ্য ছিল আওয়ামী লীগ (Awami League)–কে নিষিদ্ধ করার জন্য একটা নাটক সাজানো।”

এনসিপি বলছে ‘নাটক নয়, মোমেন্টাম ছিল’

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) (National Citizen Party – NCP)র যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার (Sarwar Tushar) বলেন, “নাটক হয়নি। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আমরা আগে থেকেই কর্মসূচি দিয়ে আসছিলাম। আবদুল হামিদের ঘটনাটি আমাদের সেই দাবির ‘মোমেন্টাম’ তৈরি করে দেয়।”

উল্লেখ্য, তার বিদেশ যাত্রার পর মানবতাবিরোধী অপরাধ আইন সংশোধন করে আওয়ামী লীগের বিচার প্রক্রিয়ার ধারা যুক্ত করা হয় এবং দলটির নিবন্ধন নির্বাচন কমিশন স্থগিত করে।

তিনি কোথায় গেলেন?

ফেরার পর আবদুল হামিদ নিকুঞ্জ বা কিশোরগঞ্জে না গিয়ে এক ‘বিশেষ জায়গায়’ অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। সেখানে তার স্ত্রীও আছেন। জানা যায়, তিনি এখনো ক্যানসারে আক্রান্ত এবং নিরাপত্তার স্বার্থে ওই স্থানে থাকছেন।

মামলার অবস্থান

জুলাই আন্দোলন–এর একটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আবদুল হামিদকে আসামি করা হয়েছে। তবে এখনো কোনো চার্জশিট দাখিল হয়নি। ফলে তার গ্রেপ্তারের আইনগত ভিত্তি এখনও তৈরি হয়নি।

সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে ‘দ্বৈত অবস্থান’

তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দিয়েই কর্মকর্তাদের বরখাস্ত ও পরে ‘দোষী না হলে গ্রেপ্তার নয়’ বক্তব্য—এ দ্বৈত অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা সাঈদ হাসান খান (Saeed Hasan Khan)।

তিনি বলেন, “সরকারের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ যদি সব জানত, তাহলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কেন?”