সাংবাদিক ও জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক জিল্লুর রহমান (Zillur Rahman) বলেছেন, “বাংলাদেশের মানুষ আর রূপকথা চায় না, তারা চায় প্রকৃত গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং নৈতিক নেতৃত্ব।” ৮ জুন নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণমূলক বক্তব্যে তিনি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) (National Citizen Party – NCP)র কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা করেন।
“ভেবেছিলাম ভিন্নধারার রাজনীতি আসবে, কিন্তু ফিরলো পুরনো মোহ”
জিল্লুর রহমান বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর মানুষ আশা করেছিল এক নতুন ধারা আসবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে পুরনো অভ্যাস, পুরনো অহংকার আর সুযোগসন্ধানীরা ফিরে এসেছে নতুন মোড়কে।”
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন ২০২৪ সালের অভ্যুত্থান ছিল কোনো দল বা আন্তর্জাতিক শক্তির সহায়তায় নয়, বরং ছাত্র, তরুণ, বেকার, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, এমনকি কৃষকের ক্ষোভ থেকে গড়ে ওঠা এক স্বতঃস্ফূর্ত গণজাগরণ।
তিনি বলেন, “আবু সাঈদ (Abu Saeed) হত্যার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর যেন দেশের সব ক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়। সেই আন্দোলনের কোনো কেন্দ্র বা নেতা ছিল না, কিন্তু তবুও এত শক্তিশালী ছিল যে সরকার বিদায় নিতে বাধ্য হয়।”
“আন্দোলনের ইতিহাস বিকৃত হচ্ছে, নায়কের আসনে সুবিধাপ্রাপ্তরা”
তিনি অভিযোগ করেন, এখন সেই আন্দোলনকে ‘পরিকল্পিত’ বলে দেখানো হচ্ছে, যাতে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী নিজেদের সাফল্যের দাবিদার হতে পারে। “এটি ইতিহাস বিকৃতি এবং আন্দোলনে জীবন দেয়া মানুষের প্রতি অসম্মান,” বলেন তিনি।
বিশেষ করে এনসিপি নেতাদের সমালোচনা করে বলেন, “তারা যেন এক নতুন পৌরাণিক চরিত্রে পরিণত হয়েছেন, যেখানে ত্যাগ নয়, উচ্চস্বরে উপস্থিতিই সাফল্যের মাপকাঠি হয়ে উঠেছে।”
এনসিপির বিলাসিতা ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব
জিল্লুর রহমান বলেন, “তিন মাসের মধ্যে এনসিপির নেতাদের বিলাসবহুল জীবনযাপন, পাঁচতারকা হোটেলের ইফতার পার্টি, ফেসবুকে বিদ্রূপ—এসব মানুষের মনে পুরনো রাজনৈতিক গল্প ফিরিয়ে এনেছে। নেতা ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ, শোডাউনে শতাধিক গাড়ি, এসব প্রশ্ন তোলে নেতৃত্বের সদিচ্ছা নিয়ে।”
তিনি যোগ করেন, “শোকজ দেওয়া হলেও তা জনমতের চাপে। আর যেসব দ্বন্দ্ব সামনে এসেছে, তা গণতান্ত্রিক মতবিনিময় না হয়ে জনসংযোগবিমুখ ক্ষমতার লড়াইয়ের মতো।”
সেনাবাহিনী ও সরকারের মধ্যে উত্তেজনা, ইউনূস-তারেক বৈঠকের গুঞ্জন
তিনি উল্লেখ করেন, “সরকার ও সেনাবাহিনীর (Bangladesh Army) মধ্যে ঠাণ্ডা উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এমন মুহূর্তে তারেক রহমান (Tarique Rahman) ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)–এর সম্ভাব্য বৈঠক এবং আন্তর্জাতিক চাপে দেশ একটি মোড়ে দাঁড়িয়ে।”
তিনি হুঁশিয়ারি দেন, “যদি এনসিপি নেতৃত্ব প্রশ্ন এড়িয়ে যায়, তাহলে তারা পুরনো রাজনীতির ধারায় পরিণত হবে। নতুন বাংলাদেশ বক্তৃতা দিয়ে সম্ভব না—প্রয়োজন সাহসী নেতৃত্ব, স্বচ্ছ কর্মসূচি এবং জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ।”