‘শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও সিস্টেম রয়ে গেছে’—ঢাবি অধ্যাপক সায়মা ফেরদৌসের স্পষ্ট বক্তব্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Dhaka) আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বিভাগের অধ্যাপক সায়মা ফেরদৌস (Saima Ferdous) বলেছেন, “শেখ হাসিনা হয়তো পালিয়ে গেছেন, কিন্তু পুরো সিস্টেমটা এখনো রয়ে গেছে।” তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ফ্যাসিবাদের কারণে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়েছে, এবং গণভূত্থানের পরেও সেই ব্যবস্থার প্রভাব টিকে রয়েছে।

টকশোতে সোজাসাপ্টা মন্তব্য

সোমবার (৯ জুন) একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে অধ্যাপক সায়মা ফেরদৌস বলেন, “গণভুত্থানের পরে যেমনটা হয়, ঠিক সেভাবেই অতীতের ফ্যাসিজম প্রতিটি ইনস্টিটিউশনাল ডেমোক্রেসিকে ধ্বংস করেছে। শেখ হাসিনা হয়তো এখন নেই, কিন্তু পুরো সিস্টেম এখনো বিদ্যমান।”

উপস্থাপকের প্রশ্ন ছিল, “রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে আপনি কী পরিবর্তন দেখছেন এবং কতটুকু সন্তুষ্ট?” উত্তরে সায়মা বলেন, “উন্নয়ন শব্দটা যেমন একটা বয়ানে পরিণত হয়েছিল, এখন ‘রিফর্ম’ এবং ‘সংস্কার’ শব্দগুলোও সেই রকম বয়ানে পরিণত হচ্ছে। প্রত্যাশা আমাদের থাকেই, তবে এই মুহূর্তে বিশাল সংস্কার সম্ভব নয়, এটাও বুঝতে হবে।”

হতাশার মাঝেও ইতিবাচক দিক দেখেন

সায়মা ফেরদৌস বলেন, “নয় মাসকে আমি খুব অল্প সময় বলব না, নয় মাস অনেক কিছু পরিবর্তনের জন্য যথেষ্ট হতে পারে। হতাশার পাশাপাশি অনেক ইতিবাচক দিকও আছে। আজকে আমরা টকশোতে এসব কথা বলছি, সেটাও তো এক ধরনের অগ্রগতি।”

সাহসী ভূমিকার পেছনে বিশ্বাসের জায়গা

উপস্থাপিকা স্মরণ করিয়ে দেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় শহিদ মিনারে দাঁড়িয়ে অধ্যাপক সায়মা বলেছিলেন, “আমার ছাত্রের মুখ চেপে ধরার সাহস কে দিল আপনাদের? একটা স্বাধীন দেশে এত ভয়ে বাঁচবো কেন? একটা মারলে ১০টা আসবে, ১০টা মারলে লক্ষ আসবে।” উপস্থাপিকা প্রশ্ন করেন, “আপনার সেই সাহসের উৎস কী ছিল?”

উত্তরে অধ্যাপক সায়মা বলেন, “সততার, ন্যায়ের মানুষের ভেতর আল্লাহ তাআলা একটি শক্তি দেন। যখন কারো কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশা থাকে, তখন হারানোর ভয়ও থাকে। আমার তো কোনো ফ্যাসিস্টের কাছে কিছু পাওয়ার ছিল না, তাই হারানোরও কিছু ছিল না।”

তিনি আরও বলেন, “আমি বরাবরই একজন প্রতিবাদী মানুষ। তার ওপর আমি একজন শিক্ষক। আমি বিশ্বাস করি, পিতৃতুল্য বা মাতৃতুল্য না হলে শিক্ষক হওয়া যায় না। আমি এখনো সেই জার্নিতে আছি।”

অতীতেও ছিলেন সোচ্চার, আজও অবিচল

অধ্যাপক সায়মা ফেরদৌস ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনসহ ছাত্র-জনতার নানা দাবিতে বরাবরই সাহসী ভূমিকায় ছিলেন। ছাত্রদের পক্ষে তার স্পষ্ট ও দৃঢ় অবস্থান তাকে শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় করে তোলে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্যেও তিনি গণমাধ্যম ও টকশোতে সরব থেকে নিরপেক্ষ ও বিবেকবান অবস্থান প্রকাশ করে চলেছেন।