অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন (Azmeri Haque Badhon) সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ঈদ-পরবর্তী আলোচনায় অংশ নিয়ে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং নানা ‘এজেন্ট’ হিসেবে ট্যাগিং প্রসঙ্গে বিস্তারিত বক্তব্য দিয়েছেন।
আলোচনার শুরুতে উপস্থাপক উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র ‘খুফিয়া’–তে তিনি এক ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র (RAW) এজেন্টের চরিত্রে অভিনয় করেন, যে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়ে একটি জামাত নেতার হত্যার পরিকল্পনা করে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে উপস্থাপক বলেন, বাস্তব জীবনেও নানা ট্যাগের মুখোমুখি হয়েছেন বাঁধন।
‘র, সিআইএ, মুসাদ—সব ট্যাগই আমার গায়ে লাগানো হয়েছে’
বাঁধন বলেন,
“২০২৩ সালে খুফিয়া সিনেমার পর থেকেই আমাকে বলা শুরু হলো আমি ‘র’-এর হয়ে কাজ করছি। এরপর যখন জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদের সঙ্গে রাস্তায় নামলাম, তখন বলা হলো আমি সিআইএ (CIA) এজেন্ট। পরে শোনা গেল আমি মুসাদ (Mossad)–এর হয়ে কাজ করি। আর জামাতের আমিরের একটা মানবিক বক্তব্য শেয়ার করতেই বলা হলো আমি জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami)-এর সিক্রেট এজেন্ট!”
তিনি আরও যোগ করেন,
“একটার পর একটা ট্যাগ দিয়ে সাজানো হচ্ছে আমাকে—র, সিআইএ, মুসাদ, জামাত, এমনকি বিএনপিরও। আমি তো শুধু নিজের কাজ করি। কিন্তু আমাকে এজেন্ট বানাতে এই লোকগুলো পিছু ছাড়ে না। র-এর এজেন্টরা এখনো থেকে গেছে।”
‘ভয় থেকে শক্তিতে রূপান্তর’
আজমেরী হক বাঁধন বলেন, “শুরুর দিকে খুব খারাপ লাগতো, ভয়ও লাগত। কিন্তু এখন আমি মানসিকভাবে অনেক বেশি শক্ত। এই চ্যালেঞ্জগুলো মানুষকে গড়ে তোলে। পরবর্তী প্রজন্মকে বলব, ট্যাগিংয়ের ভয় না পেয়ে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে শিখো। এই ট্যাগারদের জয়ী হতে দেওয়া যাবে না।”
‘বন্ধু হারিয়েছি, আত্মীয় হারিয়েছি, কিন্তু প্রতিবাদ থামাইনি’
জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে রাস্তায় নামার প্রসঙ্গে বাঁধন বলেন,
“আমরা যারা অংশ নিয়েছিলাম, তারা ছিলাম এক মহাসমুদ্রের এক ফোঁটা। কিন্তু সেই এক ফোঁটার কারণেই আমার জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমি অনেক বন্ধু হারিয়েছি, আত্মীয় হারিয়েছি। যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পাশে থেকে শুধু সুবিধা নিয়েছে, তারা ভাবতেই পারে না যে কেউ নিজের স্বার্থ ছাড়িয়ে দেশের মানুষের জন্য বুলেটের সামনে দাঁড়াতে পারে।”
‘আমি ভালো অভিনয় করেছি, তাই আমাকে আসল এজেন্ট ভাবছে!’
বাঁধন মজা করে বলেন,
“অনেক কাছের মানুষ বলেছে, তুমি এত ভালো অভিনয় করেছো যে, সবাই সত্যি ভাবছে তুমি আসলেই কোনো এজেন্ট! আমি নিজেও অবাক হই, কোথা থেকে এসব ধারণা আসে!”
‘কমেন্ট করে যারা এজেন্ট বানায়, তারা কিছু সৃষ্টি করতে জানে না’
তার ভাষ্য,
“এই সমাজে যারা দেশের জন্য ভাবে না, তাদের কাছে এটা স্বাভাবিক যে সবাই নিজের স্বার্থে কিছু করে। যারা কোনো কিছু সৃষ্টি করতে পারে না, যারা মানুষের জন্য ভাবে না, তারা শুধু পেছনে বসে কমেন্ট করে—কে কিসের এজেন্ট। এটা তাদের সীমাবদ্ধতা, আমার নয়।”