দুই বুলেট শরীরে নিয়ে ৯ মাস ধরে চিকিৎসাধীন জুলাই যোদ্ধা আরিফুলের আর্তনাদ: ‘কেউ আমাদের কথা ভাবুক’

আওয়ামী লীগ (Awami League) সরকারের ১৬ বছরের শাসনের অবসানে গত বছরের ৫ আগস্ট ঘটে ভয়াবহ জুলাই গণঅভ্যুত্থান। সাধারণ জনগণের আন্দোলনে চালানো হয় গুলি, যাতে প্রাণ হারান শতাধিক এবং আহত হন হাজারো মানুষ। আহতদেরই একজন আরিফুল ইসলাম (Ariful Islam), যিনি এখন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (National Institute of Traumatology and Orthopaedic Rehabilitation)-এ দীর্ঘ ৯ মাস ধরে চিকিৎসাধীন।

চারটি গুলির আঘাতে অচল জীবন

গত ৪ আগস্ট ঢাকার রাজপথে আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হন মিরপুরের ব্যবসায়ী আরিফুল। একে একে তার শরীরে চারটি গুলি লাগে। হাসপাতালে জ্ঞান ফেরার পরই জানতে পারেন, তার দু’পা আর সচল নয়। শরীরে এখনও দুটি গুলি রয়ে গেছে, যা প্রতিনিয়ত যন্ত্রণার সৃষ্টি করছে। রক্তপাতও বন্ধ হয়নি পুরোপুরি।

আরিফুল জানান, “রাতে ব্যথায় ঘুমাতে পারি না। শরীর অবশ হয়ে আছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, বাকি গুলিগুলো বের করা সম্ভব নয়। অথচ আমি জানি না আদৌ আর কোনোদিন হাঁটতে পারব কিনা।”

‘আমরা চাই চিকিৎসা, চাই ন্যায্য বিচার’

আন্দোলনের সময় আহত হয়ে জীবন থেমে যাওয়া এই যুবক প্রশ্ন তুলেছেন, “আমাদের চিকিৎসা না হলে আপনারা কীভাবে নির্বাচন চান? আমাদের যারা মেরে ফেলল, আহত করল—তাদের বিচার আগে হওয়া উচিত।”

তিনি বলেন, “দেশের অবস্থা এমন হয়ে গেছে যে চিকিৎসা নিয়ে কেউ ভাবে না। সবাই রাজনীতি আর নির্বাচন নিয়েই ব্যস্ত। অথচ আমাদের কষ্ট বোঝে না কেউ।”

চিকিৎসকদের মতামত: গুলি বের করা সম্ভব নয়

হাসপাতালের পরিচালক ও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শরীরের ভেতরে থাকা গুলিগুলো এমনভাবে বসে গেছে যে সেগুলো বের করলে স্নায়ু সমস্যাসহ বড় ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। এমনকি সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া থেকে আসা বিশেষজ্ঞরাও জানিয়েছেন, এখন এই গুলিগুলো বের করাও সম্ভব নয়।

একটি পরিবারের সর্বনাশ

এক সময় মিরপুর ১০ নম্বরে ব্যবসা করতেন আরিফুল। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার একটি এক বছর বয়সী কন্যা সন্তান রয়েছে। এখন ৯ মাস ধরে হাসপাতালের বিছানায় পড়ে থাকায় পুরো পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে।

আরিফুলের মতো আহত আরও অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা এখনও পুনর্বাসন বা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। তাদের একটাই দাবি—পুনর্বাসন এবং পরিবার বাঁচাতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ।

“দেশের মানুষের জন্য আমরা জীবন দিয়েছি, পঙ্গু হয়েছি। কেউ অন্তত আমাদের কথা একবার ভাবুক”—এই আর্তি জানিয়ে গেছেন জুলাই যোদ্ধা আরিফুল।