যুবদল কর্মী মামুন হত্যাকাণ্ড: মৃত্যুর আগে স্ত্রী-সন্তানকে শেষ বিদায় জানিয়েছিলেন

নারায়ণগঞ্জ (Narayanganj) জেলার রূপগঞ্জ (Rupganj) উপজেলার ভুলতা (Bhulta) এলাকায় যুবদল কর্মী মামুন ভূঁইয়ার হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মৃত্যুর আগে স্ত্রী ও সন্তানকে শ্বশুরবাড়ি পৌঁছে দিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বিদায় জানিয়েছিলেন মামুন। সেই বিদায় যে জীবনের শেষ বিদায় হবে, তা বুঝে উঠতে পারেননি তাঁর স্ত্রী ইমা আক্তার।

স্ত্রী-সন্তানের কাছে শেষ বিদায়

ঈদের ছুটিতে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার কথা থাকলেও ব্যবসার কারণে যাওয়া হয়নি মামুনের। মঙ্গলবার দুপুরে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে গাড়িতে তুলে দিয়ে নিজ হাতে তাঁদের বিদায় জানান। ছোট দুই মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে নেন, নিজেও সন্তানের কাছ থেকে চুমু নেন। এর কিছুক্ষণ পরই এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

বুধবার দুপুরে মামুনের স্ত্রী ইমা আক্তার দুই মেয়েকে বুকে জড়িয়ে বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘শেষবারের মতো যদি বুঝতাম, তাহলে হাত ছাড়তাম না। খুনের রাজনীতির শিকার হলো আমার পরিবার।’ তিনি এই হত্যাকাণ্ডের জন্য জেলা ছাত্রদলের (District Chhatra Dal) সাবেক প্রচার সম্পাদক জায়েদুল ইসলাম বাবু (Zayedul Islam)-কে দায়ী করেন।

রাজনৈতিক সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ড

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, মঙ্গলবার দুপুরে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ (Chhatra League) নেতাকে আটককে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বাধে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে জায়েদুল ইসলাম প্রভাব খাটিয়ে আটক নেতাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। সংঘর্ষ শেষে এলাকায় একা থাকায় মামুনকে গুলি করা হয়। গুলি তাঁর কানের পাশে মাথায় লাগে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (Dhaka Medical College Hospital) নেওয়ার পর সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

পরিবার ও রাজনৈতিক পরিচয়

মামুন ভূঁইয়া প্রয়াত আবদুল মান্নানের ছয় নম্বর সন্তান। তাঁর ভাই বাদল ভূঁইয়া (Badal Bhuiyan) ভুলতা ইউনিয়ন যুবদলের (Bhulta Union Jubo Dal) সাংগঠনিক সম্পাদক। এলাকায় একটি মুদির দোকান ও গ্যাসের সিলিন্ডার সরবরাহের ব্যবসা করতেন মামুন।

জনসমাগম ও শোকাবহ পরিবেশ

বুধবার ময়নাতদন্ত শেষে মামুনের লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই আগে থেকে বিএনপি (BNP), যুবদল (Jubo Dal) ও স্বেচ্ছাসেবক দলের (Swecchasebak Dal) নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিলেন। তার স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ স্বজনেরা আহাজারিতে ভেঙে পড়েন। দুই বছরের ওয়াজিহা ও সাত বছরের ফাতিমা বাবার মৃত্যু বুঝে উঠতে না পারলেও, পরিবেশে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

মামলার অগ্রগতি ও প্রতিক্রিয়া

নিহতের ভাই বাদল ভূঁইয়া বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় (Rupganj Police Station) মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় জায়েদুল, সাব্বির হোসেনসহ ১৬ জনের নাম এবং অজ্ঞাত আরও ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামুনকে ঘেরাও করে গুলি করা হয়েছে বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে।

তবে অভিযুক্ত জায়েদুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘আমি বাসায় ছিলাম। সেখানে থাকিনি।’