আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পতনের জন্য নিজেদের ‘ভুল’কে দায়ী করলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

আবদুল হামিদ (Abdul Hamid) মনে করেন, আওয়ামী লীগের (Awami League) রাজনৈতিক পতনের জন্য দলেরই অতীতের ভুলগুলো দায়ী। সাবেক এই রাষ্ট্রপতি দলের বর্তমান অবস্থাকে ‘ভুলের শাস্তি’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছেন, “গত ১৬ বছরে অনেক ভুল করেছি, না হলে আজকের এই পরিণতি হতো না।”

পরিবারের সঙ্গে আবদুল হামিদ

এ কথা জানান তার শ্যালক ডা. আনম নওশাদ খান (Dr. ANM Naushad Khan)। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন রাজনীতিতে থাকলেও বর্তমানে আবদুল হামিদ পুরোপুরি পারিবারিক পরিবেশে অবস্থান করছেন এবং কোনো রাজনৈতিক যোগাযোগ রাখছেন না।

৭ মে রাতে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড (Thailand) যাত্রাকালে সাবেক রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ছিলেন নওশাদ খান। চিকিৎসা শেষে ৯ জুন গভীর রাতে তারা একসঙ্গে দেশে ফেরেন।

রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায়ও জানাতেন অসন্তোষ

রাষ্ট্রপতি থাকাকালে অনেক নীতিগত বিষয়ে শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)-কে নিজের অপছন্দের কথা বলতেন বলে জানান আবদুল হামিদ। তিনি বলতেন, “আমি একমাত্র ব্যক্তি ছিলাম যে অনেক কথা বলতাম—এই কারণেই অনেকেই আমাকে পছন্দ করত না।”

আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও বর্তমান অবস্থা

৫ আগস্টের আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলের শীর্ষ নেতারা কেউ পলাতক, কেউবা কারাবন্দী। তাদের বিরুদ্ধে চলছে হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার। বর্তমানে দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ, এমনকি নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন স্থগিত করেছে। এসব প্রসঙ্গে আবদুল হামিদ বলেন, “সরকার স্বৈরাচারী হলে জনগণ বেশিদিন সায় দেয় না।”

শারীরিক অবস্থা খুবই দুর্বল

৮২ বছর বয়সি সাবেক রাষ্ট্রপতির ল্যাং ক্যানসার থ্রি-টু-ফোর স্টেজের মাঝামাঝি রয়েছে, যাকে শেষ ধাপ বলা যায়। তিনি একা চলাফেরা করতে পারেন না, এমনকি নামাজ পড়তেও পারছেন না। এ বিষয়ে তিনি নিজেই আক্ষেপ করে বলেন, “নামাজ-কালাম তো পড়ি নাই, আল্লাহই জানেন কী হয়।”

দেশের মাটিতেই মৃত্যুর প্রত্যয়

বিদেশে থেকে যাওয়ার পরামর্শ থাকলেও আবদুল হামিদ বলেছিলেন, “না, আমি দেশে ফিরবই। যা হওয়ার হবে, দেশেই মরব।” তার আত্মীয়-স্বজনদের সবাই দেশেই থাকেন, তাই দেশের মাটিতেই শেষ সময় কাটাতে চান তিনি।

হাওড়ের টান এখনও রয়েছে

হাওড় (Haor) অঞ্চলের সন্তান আবদুল হামিদ সবসময় এলাকার খোঁজখবর রাখার চেষ্টা করেন। যদিও শারীরিক অবস্থার কারণে এখন আর সেখানে যেতে পারেন না, তবুও নিয়মিত এলাকার মানুষের খোঁজখবর নেন।

বঙ্গভবনে ‘বন্দিজীবন’

জাতীয় সংসদ (National Parliament)-এ সাতবারের এমপি ও ডেপুটি স্পিকার, স্পিকার এবং রাষ্ট্রপতি হিসেবে টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালনের সময় আবদুল হামিদ নিজেকে চার দেওয়ালে বন্দি বলেই মনে করতেন। বঙ্গভবনের বাসজীবনকে তিনি ‘বন্দিজীবন’ বলে উল্লেখ করেন। তবে সময় পেলেই ছুটে যেতেন হাওড়ের মাটিতে।