ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফর: প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ না পাওয়ায় প্রশ্নের মুখে বাংলাদেশের সরকার

যুক্তরাজ্যে চার দিনের সফরে থাকা বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)–কে ‘সরকারি সফরে’ আসা বলা হলেও কেন তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার (Keir Starmer)–এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারলেন না, সেই প্রশ্ন তুলে ধরে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে বিবিসি (BBC)।

সাক্ষাৎ না হওয়ার ব্যাখ্যা

গত ১২ জুন, বাকিংহাম প্যালেস (Buckingham Palace)–এ ‘কিং চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ নিতে যাওয়ার আগে, ইউনূসকে সাক্ষাৎকার নেন বিবিসি সাংবাদিক রাজিনি বৈদ্যনাথন (Rajini Vaidyanathan)। তিনি প্রশ্ন করেন, কেন প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের সঙ্গে বৈঠক হয়নি।

ইউনূস বলেন, “আমরা দেখা করতে আগ্রহী ছিলাম, কিন্তু হয়তো তিনি ব্যস্ত ছিলেন। তবে এতে করে একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে—আমি তাকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।” তিনি আরও বলেন, “আমরা অতীতকে পেছনে ফেলে এক নতুন ভবিষ্যতের সূচনা করছি।”

টিউলিপ সিদ্দিক প্রসঙ্গ

সাক্ষাৎকারে উঠে আসে লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিক (Tulip Siddiq)–এর প্রসঙ্গ, যিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি। তার বিরুদ্ধে জমি জালিয়াতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (Anti-Corruption Commission)–এর তদন্ত চলছে এবং আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

টিউলিপের সঙ্গে সাক্ষাৎ না করার বিষয়ে ইউনূস বলেন, “এটা একটি আইনি প্রক্রিয়া, আমি হস্তক্ষেপ করতে চাই না।” তিনি আদালতের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানান এবং বলেন, “আমি আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশনের ওপর আস্থা রাখি।”

আইনগত প্রক্রিয়া ও বিতর্ক

টিউলিপের আইনজীবীরা বলছেন, দুদক তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি এবং তদন্তের ভিত্তি নেই। ইউনূস এ বিষয়ে বলেন, “আইনি প্রক্রিয়াগুলো সময় নেয়… এটা আইনজীবী বনাম আইনজীবীর বিষয়।” প্রশ্ন করা হলে, তিনি জানান, যদি প্রমাণ পাওয়া যায় তবে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি আইনের আওতায় পড়তে পারে।

যুক্তরাজ্যের সাহায্য কমে যাওয়ার প্রভাব

সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ বাজেটে বিদেশি সাহায্য কমানোর প্রসঙ্গও আসে। ইউনূস বলেন, “এটা বড় ধাক্কা। তবে আমাদের মানিয়ে নিতে হবে।” তিনি উল্লেখ করেন, ইউএসএইড-এর অর্থ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কীভাবে রোহিঙ্গা সংকট আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

টিউলিপ সিদ্দিকের প্রতিক্রিয়া

অনুষ্ঠানে যোগ না দিলেও টিউলিপ একটি বিবৃতি দিয়েছেন, যেখানে তিনি বলেন, “অধ্যাপক ইউনূস আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রাজি না হওয়ায় আমি হতাশ। আমি আশা করি তিনি এই অপপ্রচার বন্ধে মনোযোগ দেবেন এবং আদালতে প্রমাণিত হবে যে, এই অভিযোগের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।”