লন্ডনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) এবং তারেক রহমান (Tarique Rahman) এর বৈঠকের মাধ্যমে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি নির্ধারণ হওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এই বৈঠকের পর ৩০০ আসনের জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (Bangladesh Nationalist Party) – বিএনপি (BNP) এর সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ ও নির্বাচনি তৎপরতা বেড়েছে।
নির্বাচনি তৎপরতা শুরু
প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকার ভোটারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপন, উঠান বৈঠক, মতবিনিময় সভা এবং সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা যাচাই করছেন। অনেকেই কোরবানির ঈদের সময় এলাকায় থেকে ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন, ঈদের খাবার বিতরণ করেছেন, এমনকি কিছু প্রার্থী নিজেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চেয়েছেন।
শরিকদের আসন ছাড়ার আলোচনায় বিএনপি
বিএনপি এখন শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনায় নেমেছে। কোন আসনে কার প্রার্থীতা থাকবে তা নির্ধারণের লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ের তথ্য ও জনপ্রিয়তা যাচাই করা হচ্ছে। তারেক রহমান ব্যক্তিগতভাবে প্রার্থীদের তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করছেন এবং প্রার্থীদের নির্বাচনি এলাকায় কাজ করার নির্দেশও দিয়েছেন।
দলীয় কৌশল ও মনোনয়ন প্রক্রিয়া
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের মনোনয়নে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে—দলের প্রতি আনুগত্য, ত্যাগ, অভিজ্ঞতা ও জনসম্পৃক্ততা। ১৯৯১, ২০০৮ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীরাও বিবেচনায় রয়েছেন। ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী’ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা ত্যাগী নেতাদেরও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। পাশাপাশি নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে পরিচ্ছন্ন ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী চূড়ান্ত করতে চায় বিএনপি।
নেতৃবৃন্দের মতামত
ঢাকা-১৬ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও মহানগর উত্তর বিএনপি আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, তারা নিয়মিত জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং দলের ৩১ দফা তুলে ধরছেন।
ঢাকা মহানগর বিএনপি সাবেক সহসভাপতি ও ঢাকা-১৪ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী রবিউল আউয়াল জানান, মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে তারা মাঠে কাজ করছেন।
ফেনী-১ আসনের প্রার্থী হতে ইচ্ছুক রফিকুল আলম মজনু বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর সাধারণ মানুষের আগ্রহ বেড়েছে।
বিএনপি-র স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি ঢাকা বা শরীয়তপুর থেকে নির্বাচন করতে প্রস্তুত।
দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তারা ঐক্যবদ্ধ ছিল। এবার নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন যাত্রা শুরু হবে।
মাঠে তৎপরতা আরও বৃদ্ধি
বিএনপি এর অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশী ঈদের ছুটি কাজে লাগিয়ে নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগ চালিয়েছেন। কেউ কেউ ঢাকায় না ফিরে নির্বাচনি এলাকায় অবস্থান করছেন ভোটারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার জন্য।
নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ
ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তারেক রহমান এর মধ্যে বৈঠকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন শিগগিরই নির্ধারিত তারিখ ও রোডম্যাপ ঘোষণা করবে।
এতে করে নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তার অবসান ঘটেছে এবং দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন একটি গতি পেয়েছে।