বিপ্লব ছেলের হাতের মওয়া নয়, এটি সময়সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য প্রক্রিয়া : গোলাম মাওলা রনি

বিপ্লব সম্পর্কে বর্তমান সময়ের আলোচনাকে বাস্তবতার নিরিখে মূল্যায়ন করে সাবেক সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ ও কলাম লেখক গোলাম মাওলা রনি (Golam Mawla Rony) বলেছেন, “বিপ্লব কি ছেলের হাতের মওয়া, ডাক দিলেই হয়ে যাবে?” তিনি বলেন, একটি বিপ্লব ঘটাতে শুধু আহ্বান জানানো নয়, দরকার হয় ত্যাগ, মেধা, সময় এবং জনগণের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া নেতৃত্বের।

বিপ্লবের ‘মাস্টারমাইন্ড’দের সমালোচনা

রনি বলেন, বর্তমানে যাঁরা নিজেদের বিপ্লবের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দাবি করছেন, তাঁরা এতটাই ‘বুদ্ধিজীবী’ হয়েছেন যে, তাঁদের চিন্তার যন্ত্রণায় কারো দাঁত পড়ে যাচ্ছে, কারো মাথার চুল পেকে সাদা হয়ে যাচ্ছে। এরা সারাক্ষণ দেশ, জাতি ও রাজনীতি নিয়ে ভাবনায় বিভোর, যার প্রভাব পড়ছে তাঁদের মেজাজে ও ব্যবহারে।

গত সাত মাসে বিভ্রান্তি ও ব্যর্থতা

গোলাম মাওলা রনি বলেন, গত ৫ আগস্টের পর একদল ব্যক্তি সামনে এসে নিজেদের বিপ্লবের মুখপাত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন। তাঁরা যেন দেখাচ্ছেন, দীর্ঘদিন ধরে সরকার পতনের আন্দোলনে জড়িত ছিলেন, বিশেষ করে শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)-কে ক্ষমতা থেকে সরাতে ২০০৯ সাল থেকেই কাজ করছেন। তবে প্রকৃতপক্ষে এইসব নতুন বিপ্লবীদের বিভ্রান্তি ও নেতৃত্বহীনতার কারণে ছাত্রদের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে এবং ভুল পথে পরিচালিত হয়েছে।

তিনি বলেন, “ছাত্ররা, যারা এই বিপ্লবের প্রাণপুরুষ, তারা এখন একটার পর একটা ভুল করে যাচ্ছে, এবং এখনও সেই ভুলের ধারাবাহিকতা চলছে।”

ভ্রান্ত নেতৃত্ব ও বিপ্লবের চেতনার পতন

রনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, একজন অনুগামীকে যদি এমন কোনো কাজে লাগানো হয়, যা সে পারবে না—তাহলে সেটা বিপ্লবের নাম ব্যবহার করে মানুষকে ধ্বংস করার শামিল। তিনি মন্তব্য করেন, “এভাবে গত সাত-আট মাসে এত বেশি ঘটনা ঘটেছে যে বিপ্লবের বীজটাই মরে গেছে, এবং পুরো চিত্রটাই এলোমেলো হয়ে গেছে।”

বাস্তবতার নিরিখে বিপ্লবের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা

রনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, ১৯৮৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পরে প্রকৃত পরিবর্তন আনতে সময় লেগেছে প্রায় ৩৫ বছর। তখনকার নেতৃত্ব, পরিস্থিতি এবং মানুষের মননশীলতার সাথে তুলনা করে তিনি বলেন, “দ্বিতীয় বিপ্লব তো মুরগির ডিম না যে পেড়ে দিলেই হবে কিংবা কোনো যাদুকাঠি না।”

তিনি মনে করিয়ে দেন, একটি বিপ্লব ঘটাতে প্রয়োজন হয় কোটি মানুষের মন ও হৃদয় জয় করার, যার জন্য কখনো ৩০, ৪০ কিংবা ১০০ বছরও লেগে যেতে পারে।

আত্মবিধ্বংসী মনোভাব পরিহারের আহ্বান

রনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “এত ত্যাগের পর আমরা যা অর্জন করেছি, সেটিকে নিজেরা ধ্বংস করে এখন আবার দ্বিতীয় বিপ্লবের কথা বলছি—এটি আত্মহত্যার শামিল।” তাঁর মতে, এই বিভ্রান্তি থেকে বেরিয়ে এসে পূর্বের বিপ্লবকে পুনর্জীবিত করাই এখন সময়ের দাবি। অন্যথায় যারা এই বিপ্লবের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।