বিএনপি (BNP) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া (Khaleda Zia) আবারও জাতীয় রাজনীতিতে দৃঢ়ভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনার মুহূর্তে লন্ডন (London) বৈঠকের পেছনে মূল চালিকা শক্তি ছিলেন তিনি, এমনটাই ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
এপ্রিলে নির্বাচন ঘোষণার প্রেক্ষাপট
৬ জুন মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus), অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, আকস্মিকভাবে জাতির উদ্দেশে ভাষণে এপ্রিলে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেন। এই ঘোষণায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সঙ্কট এবং উত্তেজনা দেখা দেয়। কারণ, বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দাবি করেছিল এবং সেভাবেই আলোচনা চলছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন (National Consensus Commission)–এ।
খালেদা জিয়ার হস্তক্ষেপ এবং নির্দেশনা
এই সংকটময় পরিস্থিতিতে ঈদের দিন ফিরোজা (Firoza)তে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের ডেকে নেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি সকলকে বলেন, ‘এখন জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করা যাবে না। সকলকে সহনশীল হতে হবে এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধান করতে হবে।’ তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, ‘দেশকে সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ গণতন্ত্র।’
বেগম জিয়ার এই আহ্বান এবং নেতৃত্বে আন্দোলনের প্রস্তুতি স্থগিত করে বিএনপি। তিনি স্পষ্ট করে দেন, আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে কেউ যেন পতিত স্বৈরাচারের দিকে দেশকে নিয়ে না যায়।
লন্ডন বৈঠকের নেপথ্যে
পরবর্তীতে তাঁর পরামর্শেই তারেক রহমান (Tarique Rahman) এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যকার ঐতিহাসিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে তারেক রহমান বলেন, “আম্মা আপনাকে সালাম দিয়েছেন।” এ বক্তব্যের মাধ্যমে বোঝা যায়, বিএনপির সিদ্ধান্তের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন খালেদা জিয়া।
এই বৈঠকের মাধ্যমে বিএনপি তাদের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দেয়, যা দলের বড় ধরনের ছাড় এবং দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব
রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার প্রজ্ঞা এবং দেশপ্রেম নতুন নয়। ’৮৬ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে ’৯৬ সালের নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত তাঁর অবদান বরাবরই ছিল জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া। তাঁর নেতৃত্বেই ’৯০-এ স্বৈরাচার পতনের ইতিহাস রচিত হয়।
তিনি সব সময় ব্যক্তিস্বার্থ নয়, দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তাঁর রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে দেখা গেছে, আপসহীন অবস্থানের ভেতরেও তিনি জাতীয় ঐক্য রক্ষায় প্রস্তুত।
নিপীড়নের মুখেও অদম্য
আওয়ামী লীগ (Awami League) সরকারের সময় তাঁকে দীর্ঘদিন কারারুদ্ধ রাখা হয়। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায়ও ন্যূনতম চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হয়নি। তবে আজও তিনি রাজনৈতিক নেতৃত্বে সক্রিয় এবং জাতির অভিভাবক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
জাতীয় ঐক্যের কাণ্ডারি
বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয়, শক্তিশালী এবং দেশনেত্রীর ভূমিকা পালনকারী রাজনীতিক হলেন বেগম খালেদা জিয়া। তাঁরই মধ্যস্থতায় রাজনৈতিক সমঝোতা সম্ভব হয়েছে, যা দেশকে সংঘাতের পথ থেকে সুরক্ষা দিয়েছে। তিনি হয়ে উঠেছেন প্রকৃত ‘জাতীয় ঐক্যের প্রতীক’।