রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট (Ambulance Syndicate) দীর্ঘদিন ধরেই ত্রাস সৃষ্টি করে রেখেছে। রোগী কিংবা মরদেহ পরিবহনের সময় এই সিন্ডিকেটের বাইরে কেউ সেবা দিতে পারে না। এর ফলে স্বজনদের পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে এবং গুনতে হয় ২-৩ গুণ বেশি ভাড়া।
ভুক্তভোগীদের করুণ অভিজ্ঞতা
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (Chittagong Medical College Hospital)–এ চিকিৎসাধীন মায়ের মৃত্যু হলে মরদেহ নিতে গিয়ে একজন ভুক্তভোগী পড়েন সিন্ডিকেটের কবলে। যেখানে সর্বোচ্চ ভাড়া হওয়ার কথা ৪ হাজার টাকা, সেখানে তাকে গুনতে হয় ১১ হাজার টাকা।
চার-পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টা করেও বাইরে থেকে কোনো অ্যাম্বুলেন্স আনতে না পারার অভিযোগ রয়েছে তার। তিনি বলেন, “মা মারা গেছে, মরদেহ নিতে গাড়ি লাগবে, কিন্তু কেউ রাজি নয়। সবাই বলে এগারো হাজার টাকা দিতে হবে।”
আরেক ভুক্তভোগী জানান, “মরদেহ বের করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এত বেশি টাকা চায় যে আমাদের পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। পরে এক ব্যক্তিকে দেড় হাজার টাকা দিয়ে মরদেহ হাসপাতালের বাইরে নিয়ে গিয়ে অন্য গাড়িতে করে গন্তব্যে পাঠাই।”
সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়
চট্টগ্রাম মেডিকেলের বাইরে প্রায় আড়াইশো প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও সরকারি পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্স অচল করে রাখা হয়েছে। রোগীর স্বজনরা বলছেন, “কেন বাইরের গাড়ি আনতে পারবো না? আমরা কেন বাধ্য হবো শুধু ওদের গাড়িই নিতে?”
অ্যাম্বুলেন্স চালকরা জানিয়েছেন, হাসপাতালের ভেতরে রোগী নিয়ে ঢোকা গেলেও সিন্ডিকেটের বাইরে থেকে বের হওয়া নিষিদ্ধ। শুধুমাত্র সিন্ডিকেট সদস্যদের মাধ্যমে দামদর ঠিক হলে তবেই তারা রোগী নিতে পারেন।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, বাইরের গাড়ি আসলে চালকদের হুমকি-ধমকি ও মারধর করা হয়।
মালিক সমিতির অস্বীকার ও ব্যাখ্যা
চট্টগ্রাম অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমবায় সমিতি (Chittagong Ambulance Owners Cooperative Association)–এর সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুল কবির পলাশ (Nurul Kabir Palash) এবং যুগ্ম সম্পাদক মো. হাসান (Md. Hasan) অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই। চাইলে আজই ভেঙে দিতে পারি। ভাড়া নির্ধারণেও যুক্তিসঙ্গত হিসাব করা হয়।”
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সীমিত ব্যবস্থা
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দীন (Brigadier General Taslim Uddin) জানিয়েছেন, “আমাদের পার্কিংয়ে এক ঘণ্টা পরপর অভিযান চালানোর নির্দেশনা রয়েছে। অবৈধ অ্যাম্বুলেন্স অপসারণে কাজ করছে সংশ্লিষ্টরা।”
রাজধানীসহ দেশের সব হাসপাতালে একই চিত্র
চট্টগ্রামের মতো রাজধানী ঢাকার (Dhaka) সরকারি হাসপাতালগুলোতেও একই সিন্ডিকেটের প্রভাব। বাইরের কোনো অ্যাম্বুলেন্স রোগী আনতে পারলেও নিতে পারে না। সিন্ডিকেটের নির্ধারিত ভাড়া মেনে নিতেই হয় স্বজনদের, আর এর বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করলেই বাধে বিপত্তি।