‘যারা কোটা বিরোধী আন্দোলনে স্বৈরাচার হটিয়েছিল, আজ তারাই নারীদের জন্য কোটা চাইছেন: ফাহাম আব্দুস সালাম’

ফাহাম আব্দুস সালাম (Faham Abdus Salam), একজন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, তার ব্যক্তিগত ফেসবুক (Facebook) অ্যাকাউন্টে দেয়া এক স্ট্যাটাসে নারী কোটা নিয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, যেই তরুণেরা একসময় কোটা বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে স্বৈরাচার পতনের পথ তৈরি করেছিল, আজ তারাই দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানসমূহে নারীদের জন্য কোটা দাবি করছেন, যা তার মতে, অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

নারী কোটা নিয়ে ফাহামের আপত্তি

ফাহাম বলেন, বর্তমান প্রজন্মের কিছু তরুণ নারী কোটার পক্ষে সাফাই গাইছেন, কিন্তু তিনি মনে করেন, এই কোটা ব্যবস্থা ভবিষ্যতে রাজনীতিতে নারীদের আরও বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। সংসদে এমন একদল নারী প্রবেশ করবেন যারা “মানুষের সঙ্গে সম্পর্কহীন ও এনটাইটেলড”, যারা দেশের বাস্তব সমস্যা নয়, বরং ইংরেজি বইয়ে শেখা তাত্ত্বিক আদর্শ বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন। তাদের মধ্যে থাকবে যোগ্যতার অভাব এবং তারা নিজেদের শ্রেণিগত সমস্যাকেই দেশের সমস্যা মনে করে উপস্থাপন করবেন।

তিনি আরও যুক্ত করেন, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে বিশেষ সুবিধা দেয়ার অর্থ সে ব্যক্তি তা “অধিকার” হিসেবে ভাববে, এহসান নয়। ফলে এতে জন্ম নেবে ঔদ্ধত্য ও অসন্তোষ। তার মতে, সংসদে এমন নারীরা প্রবেশ করবেন যারা রাজনীতি ও সিস্টেমকেই ঘৃণা করবেন, যেটা তাদের সে স্থানে বসিয়েছে।

রাজনৈতিক বাস্তবতা ও প্রহসনের ইঙ্গিত

ফাহাম সতর্ক করে বলেন, যেখানে কোনো পুরুষ প্রার্থী ১৫ বছর ধরে কাজ করছে, সেখানে তার স্ত্রী বা মেয়ে শুধুমাত্র নারী হওয়ার কারণে মনোনয়ন পাবেন। এমন ঘটনা ভবিষ্যতে বিএনপি (BNP) ও জামায়াত (Jamaat) দলেও দেখা যাবে। তিনি বলেন, সংসদে প্রবেশ করলেও ওই নারী প্রার্থীদের কর্তৃত্ব থাকবে না, বরং দায়িত্ব চাপবে তাদের কাঁধে, যা রাজনীতিতে এক ধ্বংসাত্মক রূপ আনবে।

নারী সংসদ সদস্যদের অনেকেই সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে ‘দুধভাত’ হিসেবে বিবেচিত হবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত হয়ে নারীরা সত্যিকারের সম্মান অর্জন করতে পারবেন না বলেও মত দেন।

‘এফার্মেটিভ একশান’ প্রসঙ্গে মন্তব্য

ফাহাম এফার্মেটিভ একশানের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি উদাহরণ হিসেবে তারেক রহমান (Tarique Rahman)–এর ৩০ বছরের রাজনৈতিক পরিশ্রমের কথা উল্লেখ করে বলেন, যদি কোনো নারী শুধু নারী হওয়ার কারণে একই স্থান দখল করেন, তবে তিনি কখনো তার সহকর্মীদের সম্মান অর্জন করতে পারবেন না।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও হতাশা

ফাহাম এক ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন, কিছুদিন আগে তিনি বাথরুমে বসে তার শ্বশুরকে বোঝাতে চেষ্টা করেছিলেন কেন নারী কোটার বিরোধিতা করা উচিত। সে সময় তার স্ত্রী ফোন কেড়ে নিয়ে যান। তিনি এই ঘটনার মাধ্যমে বুঝিয়েছেন, সমাজে এমন অনেক বাস্তবতা আছে যেখানে যুক্তি দিলেও তা গ্রহণযোগ্য হয় না। তিনি বলেন, তার বক্তব্য ১০০% যুক্তিসংগত হলেও, এই দেশ ‘একজন বিহারীর’ কথা গ্রহণ করবে না কারণ সবাইকে ঘরে ফিরে স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে বসে খেতে হয়।

ফাহাম শেষ মন্তব্যে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলই নারী কোটা বিষয়ক এই ‘ধ্বংসাত্মক উদ্যোগ’ নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছে না, কারণ সবাই ভোটের রাজনীতির হিসাব-নিকাশে ব্যস্ত।