লন্ডনে ইউনূস-তারেক বৈঠকের যৌথ বিবৃতি প্রস্তুত হয়েছিল আগেভাগেই

লন্ডনে (London) বৈঠকের দুদিন আগেই প্রস্তুত করা হয়েছিল ড. মোহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) ও তারেক রহমান (Tarique Rahman) এর যৌথ বিবৃতি। তবে দুই নেতার বৈঠকের পরই সম্মতিতে তা গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।

সরকার ও বিএনপি (BNP) ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই বৈঠকে তারেক রহমানের সৌজন্যপূর্ণ আচরণে ড. ইউনূস এতটাই মুগ্ধ হন যে, কোনো জটিলতা ছাড়াই আলোচনা এগিয়ে যায়। বৈঠকে তারা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গঠনের রূপরেখা, দুর্নীতি ও হানাহানি বন্ধ, এবং শক্তিশালী বিরোধী দল গঠনের বিষয়ে একমত হন।

সংসদে বিরোধী দল থাকা জরুরি

দুই নেতা মনে করেন, সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকলে সরকারের ভুল ধরিয়ে দেওয়া যায় না এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয় না। তারা ২০১৪ সালে শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) সরকারের সময় সংসদে বিরোধী দলের অনুপস্থিতির উদাহরণ তুলে ধরেন, যেখানে এককভাবে ক্ষমতাসীন দল কর্তৃত্ববাদী রূপ নেয়।

বিএনপি মনে করে, ‘পলাতক ফ্যাসিস্টরা’ বিদেশ থেকে কথা বললে জনগণ সেগুলো গ্রহণ করতে পারে, তাই সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা অপরিহার্য। তারা এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের অঙ্গীকার করে।

বৈঠকে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ ও আলোচ্য বিষয়

উক্ত আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (Amir Khosru Mahmud Chowdhury), নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান (Dr. Khalilur Rahman), পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম (Shafiqul Alam)।

১৩ জুন লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নির্বাচন সময়সূচি ছাড়াও ভবিষ্যৎ সরকার কাঠামো, সংস্কার প্রক্রিয়া এবং গণহত্যার বিচার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। জুলাই সনদের ভিত্তিতে ঐকমত্যে পৌঁছানোর কথাও তারা জানান।

ষড়যন্ত্র প্রতিহত ও জনগণের উদ্বেগ দূর করার প্রত্যাশা

বৈঠকে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলার বিষয়েও আলোচনা হয়। দুই নেতা বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে দেশের জনগণের মধ্যে যে উদ্বেগ বিরাজ করছে, তা এই বৈঠকের মাধ্যমে দূর হবে বলে তারা প্রত্যাশা করেন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, “তারেক-ইউনূস বৈঠক ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য গেম ওভার”—এটি ছিল তাদের বিরুদ্ধে ‘শেষ পেরেক’।

নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক আলোচনা

বৈঠকে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। রোহিঙ্গা (Rohingya) সংকট, মায়ানমার (Myanmar) এর রাখাইন রাজ্যে করিডর ব্যবস্থা, সেনাবাহিনীর ভূমিকা এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়েও খোলামেলা আলোচনা হয়।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় ইউনূসের ভূমিকা

তারেক রহমান বলেন, “আমার মা খালেদা জিয়া (Khaleda Zia) এবং আপনি—আপনাদের পরামর্শেই ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গড়তে চাই।” এমনকি, তিনি বলেন, “আপনাকে আমরা ছাড়ছি না, ভবিষ্যৎ সরকারের সঙ্গেও আপনার থাকতে হবে।”

যদিও ড. ইউনূস এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি নির্বাচন-পরবর্তী সরকারে থাকছেন না, তবে বিএনপির সূত্র জানায়, নির্বাহী ক্ষমতার বাইরে থেকেও ইউনূসের দিকনির্দেশনা কাজে লাগাতে চায় দলটি।

তারেক রহমানের প্রশংসায় ইউনূস

বৈঠকের পর ড. ইউনূস জানান, তিনি আগে কখনও তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। কিন্তু সাক্ষাৎকালে তারেককে অত্যন্ত ভদ্র, অমায়িক এবং সজ্জন মানুষ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। তিনি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কথা স্মরণ করে বলেন, তারেক তাদের মতোই অসাধারণ মানুষ।