কাগজপত্রে টিউলিপকে বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করেছে দুদক : চেয়ারম্যানের মন্তব্য

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) ভাগ্নি ও যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ সিদ্দিক (Tulip Siddiq) নিজেকে ব্রিটিশ দাবি করলেও, তার জমা দেওয়া বিভিন্ন নথিপত্র দেখে তাকে বাংলাদেশি নাগরিক বলে মনে করছে দুর্নীতি দমন কমিশন—এমন মন্তব্য করেছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন (Mohammad Abdul Momen)।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্তব্য

সোমবার (১৬ জুন) বিকেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “টিউলিপ নিজেকে নির্দোষ বলছেন, কিন্তু তার আইনজীবী আমাদের কাছে চিঠি দিয়েছেন কেন? তিনি মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন কেন?” তিনি বলেন, “কাগজপত্র পর্যালোচনা করে আমরা তাকে বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করছি। এখন পরিস্থিতি বুঝে কখনো ব্রিটিশ, কখনো বাংলাদেশি পরিচয় দেওয়া কি গ্রহণযোগ্য? তা সাংবাদিকরা ভেবে দেখুন।”

“টিউলিপ আমাদের চোখে অভিযুক্ত ও পলাতক”

দুদক চেয়ারম্যান জানান, “টিউলিপকে আমরা বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে ডিল করছি। তিনি আমাদের চোখে একজন অভিযুক্ত ও পলাতক।” রাজউক থেকে ফ্ল্যাট নেওয়া, গুলশানে সম্পত্তি সংক্রান্ত অনিয়মসহ একাধিক অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, “টিউলিপের আয়কর রিটার্নে দেখা গেছে, হঠাৎ করে তার কাছে থাকা স্বর্ণ ১০ ভরি থেকে বেড়ে ৩০ ভরি হয়েছে—কিন্তু স্বর্ণের দামে কোনো পরিবর্তন নেই।”

মাছের খামার ও আয়ের অস্বচ্ছতা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) (NBR) এবং দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরের আয়কর রিটার্নে টিউলিপ বাংলাদেশে মাছের খামার থেকে ৯ লাখ টাকা আয়ের তথ্য দেন। অথচ কোথাও তার এমন কোনো খামারের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। টিউলিপ আয়কর নথিতে একাধিক ঠিকানা ব্যবহার করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে গুলশান-১ (Gulshan-1) এলাকার একটি ঠিকানা।

এনবিআরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “অনেকেই কর ফাঁকির উদ্দেশ্যে অস্তিত্বহীন মাছের খামার দেখান। টিউলিপও সেই পথই নিয়েছেন।” কারণ আইন অনুযায়ী মৎস্য খাত থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত হওয়ায় এ সুবিধা নেওয়া হয়।

একজন অভিজ্ঞ আয়কর কর্মকর্তা ঘটনাটিকে ইতিহাসের ‘মাৎস্যন্যায়’-এর সঙ্গে তুলনা করে বলেন, “এটি বড় মাছের ইচ্ছেমতো ছোট মাছ গিলে ফেলার ন্যায়সঙ্গত পরিস্থিতি।”

শেখ হাসিনার খামার আয় প্রসঙ্গ

ভারতে অবস্থানরত থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের নির্বাচনের হলফনামায় মাছের খামার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা আয় দেখান। তবে কোথাও সেই খামারের অবস্থান উল্লেখ ছিল না। ২০১৮ সালের হলফনামায় অবশ্য তিনি মৎস্য খাত থেকে কোনো আয় দেখাননি।

বাংলাদেশি পরিচয়পত্র ও এনআইডি

টিউলিপ ২০১৭ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি একজন ব্রিটিশ এমপি, বাংলাদেশি নই।” কিন্তু সরকারি নথি অনুযায়ী তার রয়েছে বাংলাদেশি এনআইডি, পাসপোর্ট ও টিআইএন নম্বর। দুর্নীতির অভিযোগে শেখ হাসিনা, টিউলিপসহ ১০ জনের জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশন সাম্প্রতিক সময়ে লক করে দিয়েছে।

তলব প্রসঙ্গে বিস্তারিত

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) (Anti-Corruption Commission) টিউলিপকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে। অবৈধভাবে ইস্টার্ন হাউজিং থেকে ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগে গতকাল রোববার পাঁচটি ঠিকানায় তলবি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর আগে ১৪ মে পাঠানো চিঠির জবাবে তিনি হাজির হননি।

দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন (Akhtar Hossain) জানিয়েছেন, ঢাকার পাঁচটি ঠিকানায় ২২ জুন টিউলিপকে হাজির হওয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট থানার মাধ্যমে এবং প্রকাশ্য স্থানে তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।

দুদকের ভাষ্য অনুযায়ী, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, অসদাচরণ এবং বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোনো অর্থ পরিশোধ ছাড়াই রেজিস্ট্রিমূলকভাবে দুটি ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ রয়েছে টিউলিপের বিরুদ্ধে।