যুক্তরাজ্যে অর্থ পাচার: বসুন্ধরা চেয়ারম্যানের দুই ছেলের সম্পত্তির তথ্য পাঠাল দুদক

বসুন্ধরা গ্রুপ (Bashundhara Group)–এর চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান (Ahmed Akbar Sobhan)–এর দুই ছেলে—সাফিয়াত সোবহান (Safiat Sobhan) ও সাফওয়ান সোবহান (Safwan Sobhan)–এর যুক্তরাজ্যে পাচারকৃত সম্পত্তির তথ্য সে দেশের কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (Anti-Corruption Commission (ACC))। সোমবার এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন (Mohammad Abdul Momen)।

পাচারকৃত সম্পদের খোঁজ এবং চিঠি পাঠানো

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘আজ আমরা আরও কয়েকটি সম্পত্তির তথ্য যুক্তরাজ্যে পাঠিয়েছি। এর মধ্যে রয়েছে বসুন্ধরা চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের দুই ছেলে সাফিয়াত ও সাফওয়ানের কিছু সম্পত্তি।’’
তিনি আরও জানান, তাদের বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকি, ভূমি জবরদখল, ঋণের অর্থ আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে এবং তাদের দুদকে তলবও করা হয়েছে।

অন্যান্য ব্যক্তির সম্পত্তির তথ্যও পাঠানো হয়েছে

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ (Saifuzzaman Chowdhury Javed)–এর ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি (Anisuzzaman Chowdhury Rony) এবং এনআরবিসি কমার্শিয়াল ব্যাংক (NRBC Commercial Bank)–এর সাবেক নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আদনান ইমাম (Mohammad Adnan Imam)–এর সম্পত্তির তথ্যও লন্ডনে পাঠানো হয়েছে।

সাইফুজ্জামান জাবেদের বিপুল সম্পত্তি জব্দ

ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA) যুক্তরাজ্যে সাইফুজ্জামান জাবেদের ৩৪৩টি বাড়ি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি, যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি এবং প্রায় ২৫ লাখ ডলারের ব্যাংক আমানত জব্দ করেছে। শুধু যুক্তরাজ্যের বাড়িগুলোর মূল্য ৭৩.১৫ মিলিয়ন পাউন্ড, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০২৫ কোটি টাকা।

সালমান এফ রহমানের পরিবারের সম্পত্তিও জব্দ

মে মাসে সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান (Salman F Rahman)–এর ছেলে আহমেদ শায়ান এফ রহমান (Ahmed Shayan F Rahman) এবং তার চাচাত ভাই আহমেদ শাহরিয়ার রহমান (Ahmed Shahriar Rahman)–এর যুক্তরাজ্যের সম্পত্তিও জব্দ করা হয়।

লন্ডন সফর ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা

দুদক এবং বাংলাদেশ ব্যাংক (Bangladesh Bank) যৌথভাবে লন্ডনে গিয়ে ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্টি-করাপশন কোঅর্ডিনেশন সেন্টার (IACCC) এবং NCA’র সঙ্গে বৈঠক করেছে। এতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার কাঠামো তৈরি ও প্রশিক্ষণের প্রতিশ্রুতি মেলে।

চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতা

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য প্রমাণ থাকা জরুরি। শুধু আদালতের আদেশ যথেষ্ট নয়, বরং অর্থ কোথা থেকে, কীভাবে ও কোথায় গেছে তা দেখাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা রাজনীতির বাইরে থেকে কাজ করি, কারও রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে নয়।’’
কিছু সম্পত্তি কেম্যান আইল্যান্ডেও চলে গেছে বলেও জানান তিনি, যা এখনও অনুসরণ করতে পারেনি দুদক।

দ্বৈত নাগরিকত্ব ও সম্পদ বিক্রির হুমকি

বর্তমান মন্ত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ বিদেশি নাগরিক—এমন অভিযোগে তদন্ত চলছে বলেও জানান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, অনেকে বিদেশে বসে পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে দেশের সম্পত্তি বিক্রি করছেন, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

সমন্বয় এবং ভবিষ্যৎ করণীয়

দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউ ও অন্যান্য সংস্থা একসঙ্গে কাজ করছে। তবে সমন্বয়ের আরও উন্নতি প্রয়োজন বলে মত দেন দুদক চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, “আমাদের কাজ চলবে। সীমাবদ্ধতা থাকলেও আমরা থেমে থাকি না। তথ্যদাতারা আমাদের অংশীদার—শেখ হাসিনা বা তার পরিবারের বিরুদ্ধেও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত হবে।”