চট্টগ্রাম বন্দরের ইজারা ও রাখাইনে করিডোর নিয়ে জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তা হুমকিতে: চট্টগ্রাম শ্রমিক জোট স্কপ

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশি কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ড (DP World)–এর হাতে ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত এবং রাখাইনে ‘মানবিক করিডোর’ দেয়ার গুঞ্জনকে জাতীয় স্বার্থ, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি বলে আখ্যা দিয়েছে চট্টগ্রাম শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)

আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম শহরে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিক নেতারা এই অভিযোগ তোলেন এবং বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

এনসিটি ইজারা বাতিল ও করিডোর পরিকল্পনা বন্ধের দাবি

সংবাদ সম্মেলনে ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন শ্রমিক নেতারা। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:
– এনসিটির ইজারা বাতিল
পতেঙ্গা টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার ফলাফল মূল্যায়ন
– রাখাইন করিডোর পরিকল্পনা পরিহার
– কৌশলগত বিষয়ে জনগণ ও শ্রমিকদের মতামতের প্রতিফলন

ঘোষিত কর্মসূচি

স্কপের পক্ষ থেকে আগামী ২০ থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত বন্দর সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পরিকল্পনা জানানো হয়। এছাড়া, ৩০ জুন চট্টগ্রাম বন্দর গেইটে শান্তিপূর্ণ গণসমাবেশ আয়োজনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

এনসিটির বিদেশি ইজারা নিয়ে আশঙ্কা

জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এ এম নাজিম উদ্দিন বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জনগণের যে প্রত্যাশা ছিল তা পূরণ হয়নি। তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক ভাষণে ‘প্রতিহত করুন’ শব্দ ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের হুমকি দেওয়া হয়েছে, যা গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত।”

শ্রমিক নেতারা বলেন, এনসিটি হচ্ছে দেশের সবচেয়ে কৌশলগত ও আধুনিক কনটেইনার টার্মিনাল, যা এখন পুরোপুরি বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালনায় রয়েছে। এটি বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দিলে দেশের প্রায় ৪৫ শতাংশ কনটেইনার পরিচালনার ক্ষমতা বিদেশিদের হাতে চলে যাবে, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

পতেঙ্গা টার্মিনাল ও করিডোর ইস্যু

তারা আরও বলেন, ইতোমধ্যে পতেঙ্গা টার্মিনাল রেড সী গেটওয়ে–এর অধীনে গেলেও কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। ব্যবহারের হার মাত্র ১০–১২ শতাংশ। এনসিটির ক্ষেত্রেও একই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

রাখাইনে তথাকথিত মানবিক করিডোর ইস্যুতেও নেতারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাদের ভাষায়, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক নিরাপত্তাকে সংকটে ফেলতে পারে। এছাড়া, প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার পরস্পরবিরোধী বক্তব্য জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে বলেও অভিযোগ তোলেন তারা।

উপস্থিত নেতারা

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন:
তপন দত্ত, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য
কাজী নুরুল্লাহ বাহার, জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক
এস কে খোদা তোতন, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন নেতা
জাহেদ উদ্দিন শাহিন, স্কপের যুগ্ম সম্পাদক
মহিন উদ্দিন, শ্রমিক ফ্রন্ট চট্টগ্রাম জেলা নেতা
কে এম শহিদুল্লাহ, বিএফটিইউসি চট্টগ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক