সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামানের বিদেশি সম্পদ উদ্ধারে চার দেশে এমএলএআর, জবাবের অপেক্ষায় দুদক

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী (Saifuzzaman Chowdhury) ও তার পরিবারের নামে থাকা বিপুল পরিমাণ বিদেশি সম্পদের খোঁজে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, দুবাইসিঙ্গাপুরে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) (Anti-Corruption Commission)।

যুক্তরাজ্যে সম্পদ ফ্রিজ, অন্য দেশ থেকে অপেক্ষা

এপ্রিল ২০২৫-এ পাঠানো এসব এমএলএআরের জবাব এখনও আসেনি, তবে যুক্তরাজ্য এরইমধ্যে সাড়া দিয়ে সাইফুজ্জামানের ৭৩.১৫ মিলিয়ন পাউন্ড বা প্রায় ১০২৫ কোটি টাকার সম্পদ ও ২৫ কোটি টাকা ফ্রিজ করেছে। তবে এই পদক্ষেপের বিষয়ে এখনও ব্রিটেন থেকে সুনির্দিষ্ট উত্তর পায়নি দুদক।

বিভিন্ন দেশে কোটি কোটি টাকার সম্পদ

দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নামে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, দুবাইয়ে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি ফ্ল্যাট ও বাড়ি রয়েছে। এছাড়া সিঙ্গাপুরে রয়েছে অর্ধশতাধিক অ্যাপার্টমেন্ট এবং একাধিক কোম্পানি ও ব্যাংক হিসাব। এসবই ২০১৫ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে অর্জিত।

দুদক চেয়ারম্যানের বক্তব্য

দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেন, “আমরা যে অভিযোগ করছি, তা প্রমাণ করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। আদালতের আদেশ থাকলেই কেবল বিদেশি সম্পদ দেশে ফেরত আনা সম্ভব হবে। এখন আমরা যে তথ্য-প্রমাণ দিতে পারছি, তার ভিত্তিতে যতটুকু সম্ভব ততটুকুই ফেরত আনার চেষ্টা করব।”

বিদেশে সম্পদ জব্দের পদক্ষেপ

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA) সম্প্রতি ৩৬০টি বাড়িসহ বিপুল সম্পত্তি ফ্রিজ করেছে। কাতারভিত্তিক আল-জাজিরা-র এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে আসে, সাইফুজ্জামানের বিদেশে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের সম্পদ রয়েছে।

আদালতের আদেশে আরও সম্পদ জব্দ

২০২৪ সালের অক্টোবর ও মার্চে দেওয়া আদালতের আদেশে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুকমীলা জামান-এর নামে থাকা ৩৯টি ব্যাংক হিসাব, ১০২ কোটি টাকার শেয়ার, ৯৫৭ বিঘা জমি জব্দ করা হয়। এছাড়া তাদের দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

ঋণ জালিয়াতির মামলা

দুদক শুধু বিদেশে সম্পদের অভিযোগ নয়, বরং ভুয়া কোম্পানির নামে ২০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগে একটি মামলা করেছে। মামলায় সাইফুজ্জামান, তার স্ত্রী রুকমীলা জামানসহ ২৩ জন আসামি রয়েছেন।

ব্যাংক সংশ্লিষ্টতা

সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পিতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী ছিলেন ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক– ইউসিবির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। পরবর্তীতে স্ত্রী রুকমীলা জামান ২০১৭ সাল থেকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন এবং তিনিও জালিয়াতির অভিযোগে মামলার আসামি হয়েছেন।

এমএলএআর কী?

এমএলএআরের পূর্ণাঙ্গ রূপ হলো মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট। জাতিসংঘ দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনভুক্ত দেশগুলো একে অপরের সঙ্গে আইনি তথ্য বিনিময়ের জন্য এটি ব্যবহার করে। এটি পাঠাতে হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে।