জাতীয় ঐকমত্য কমিশন (National Consensus Commission) দ্বিতীয় দফার বৈঠক শুরু হয়েছে ১৭ জুন থেকে। এই বৈঠকে ঐতিহাসিক ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত হওয়ার কথা থাকলেও শুরুতেই দেশবাসী হতাশ হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর (Jamaat-e-Islami) অনুপস্থিতিতে। দলটি অভিযোগ করেছে, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (Tarique Rahman) এর বৈঠকে তাদের ‘ইগনোর’ করা হয়েছে।
বৈঠক বর্জনের যৌক্তিকতা কতটুকু?
লন্ডনে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক কোনোভাবেই অস্বাভাবিক নয়, বরং রাজনৈতিক সমঝোতার অগ্রগতি হিসেবে দেখা উচিত। এই বৈঠককে কেন্দ্র করে জামায়াতের ‘অভিমান’ যেন একটি সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সাধারণ মানুষ।
জামায়াতের দ্বৈত অবস্থান ও অতীত ইতিহাস
জামায়াত একবার নির্বাচন চায়, আবার নানাভাবে পেছনে সরে আসে—এমন বৈপরীত্য বারবার দেখা গেছে। কিছুদিন আগেই জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান (Shafiqur Rahman) লন্ডনে বেগম খালেদা জিয়া (Khaleda Zia) এবং তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি রোজার আগেই নির্বাচনের দাবি তোলেন। এখন আবার সেই অবস্থান থেকে সরে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে—আসলে জামায়াত কী চায়?
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি (BNP)-র সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে জামায়াত। ইতিহাস বলে, ৭ নভেম্বরের বিপ্লবের মাধ্যমে জামায়াত রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠা পায় জিয়াউর রহমান (Ziaur Rahman) এর উদ্যোগে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠন করে। কিন্তু এক-এগারো সংকট এবং পরবর্তীকালে জামায়াতের নীরব ভূমিকা বিএনপির কাছে একধরনের অবিশ্বাসের জন্ম দেয়।
রাজনৈতিক বাস্তবতা বোঝা জরুরি
বছরের পর বছর বিএনপি জামায়াতের পাশে থেকেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়েও সহানুভূতি দেখিয়েছে। কিন্তু জামায়াত বারবার বিএনপির প্রতি নিজের অবস্থান বদলেছে। এই ধরণের সম্পর্ক রাজনৈতিকভাবে অবিশ্বস্ত বলে বিবেচিত হয়।
এনসিপির অবস্থান ও তরুণদের ভূমিকা
জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizen Party) (এনসিপি) নামে সদ্য গঠিত দলটি, যারা জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল, তারাও প্রধান উপদেষ্টার সর্বশেষ ঘোষণায় নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এনসিপি এখন পর্যন্ত গঠনতন্ত্র বা আনুষ্ঠানিক নিবন্ধন প্রকাশ করেনি, যার কারণে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান প্রশ্নের মুখে পড়ছে। তবুও দেশবাসী তরুণদের নেতৃত্ব বিকাশ চায়, তবে পরিপক্কতা ও বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে।
জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা
লেখক মনে করেন, জামায়াতকে ‘বিচার মানি কিন্তু তালগাছ আমার’ ধরনের মনোভাব ত্যাগ করতে হবে। সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ও ছাড় দেওয়ার মধ্য দিয়েই একটি টেকসই জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠতে পারে। দেশের মানুষ চায়, ১৭ জুনের মতো বৈঠকে কোনো দল অনুপস্থিত না থেকে সবাই মিলেই ঐক্য গঠন করবে এবং ‘জুলাই সনদ’কে সফল করবে।