লন্ডনে বাংলাদেশি ‘ক্লাইভ’ ও আধুনিক ধনকুবেরদের বিপুল সম্পদ বিনিয়োগ: প্রেস সচিব

“লুট” শব্দটির ঐতিহাসিক উৎস এবং বাংলাদেশ থেকে বিদেশে ধনসম্পদ পাচারের আধুনিক রূপ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব (Press Secretary) শফিকুল আলম (Shafiqul Alam)। সম্প্রতি লন্ডন (London) সফরকালে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টে এই প্রসঙ্গগুলো তুলে ধরেন।

‘লুট’ শব্দের শিকড় পলাশীর যুদ্ধ

শফিকুল আলম লেখেন, ইংরেজি “loot” শব্দটি ব্রিটিশদের মাধ্যমে উপমহাদেশে আসে, বিশেষ করে ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধ (Battle of Plassey)-পরবর্তী সময়ে, যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা (Bengal) দখল করে নেয়। ওই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া রবার্ট ক্লাইভ ব্যক্তিগতভাবে অর্জন করেন ২৩৪,০০০ পাউন্ড, যা আজকের দামে প্রায় ২৩ মিলিয়ন পাউন্ড। এই সম্পদের মাধ্যমে তিনি পান “পলাশীর ব্যারন ক্লাইভ” উপাধি এবং ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আসন।

রবার্ট ক্লাইভের ছেলে এডওয়ার্ড ক্লাইভ (Edward Clive) ১৭৯৯ সালে টিপু সুলতানের মহীশূর (Mysore) দখলের সময় রাজকীয় ধনরত্ন লুট করেন। সেই ধন-সম্পদের কিছু এখনো সংরক্ষিত আছে ওয়েলসের পাওয়িস ক্যাসেল (Powis Castle)-এ অবস্থিত ক্লাইভ মিউজিয়ামে।

আধুনিক বাংলাদেশি ক্লাইভরা লন্ডনে

লন্ডন সফরে শফিকুল আলম পরিদর্শন করেন সেসব এলাকাও, যেখানে বাংলাদেশি ধনকুবেররা নিজেদের জন্য প্রাসাদ গড়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ (Awami League) নেতা সাইফুজ্জামান চৌধুরী (Saifuzzaman Chowdhury) লন্ডনে ৩০০টিরও বেশি সম্পত্তির মালিক। এসবের মধ্যে রয়েছে সেন্ট জনস উড ও ফিৎসরোভিয়ার মতো অভিজাত এলাকায় বিলাসবহুল বাসভবন। ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (National Crime Agency) ইতিমধ্যে ১৮৫ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পদ জব্দ করেছে তার দুর্নীতির তদন্তে।

রাজনীতি ও অর্থনীতির মেলবন্ধনে দুর্নীতির বিস্তার

প্রেস সচিব জানান, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ২৩০টি আসনে বিজয় ছিল এক ‘রাজনৈতিক বিপ্লব’। কিন্তু সে বিজয়ের ফলশ্রুতিতে যেন গোটা বাংলাদেশ—৪০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি—পরিণত হয় একটি “লাভের সম্পদ”-এ।

তিনি উল্লেখ করেন, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য (Dr. Debapriya Bhattacharya) নেতৃত্বাধীন গবেষণা অনুযায়ী, ভুয়া ঋণ ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে দেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার, যা বিনিয়োগ করা হয়েছে বিদেশে, বিশেষ করে লন্ডনের রিয়েল এস্টেট খাতে।

‘পার্মানেন্ট সেটেলমেন্টের’ আধুনিক সংস্করণ

শফিকুল আলম মন্তব্য করেন, আজকের এই দৃশ্য ব্রিটিশ শোষণের একটি আধুনিক রূপ। ব্রিটিশরা যেমন একসময় চালু করেছিল ‘পার্মানেন্ট সেটেলমেন্ট’, ঠিক তেমনি ২০০৮ সালের নির্বাচন যেন পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক ‘পার্মানেন্ট সেটেলমেন্টে’। এখানে রাষ্ট্রক্ষমতা হয়েছে ব্যক্তিগত সম্পদ বৃদ্ধির হাতিয়ার।

তিনি আক্ষেপ করে লেখেন, নিচুস্তরের নেতারা বেছে নিয়েছে বালুমহাল, বাজারে চাঁদাবাজি ও ক্ষুদ্র ঠিকাদারি, আর উচ্চপর্যায়ের নেতৃত্ব ব্যস্ত রাজধানীর ব্যাংক লুটে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যক্তিগত বাহিনীর মতো ব্যবহার করতে।