প্রত্যাশিত বাজেট হতাশায় পরিণত হয়েছে: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (CPD) (Center for Policy Dialogue)–এর সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য (Dr. Debapriya Bhattacharya) বলেছেন, প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রত্যাশা জাগালেও বাস্তবায়নে ঘাটতির কারণে তা হতাশাজনক হয়ে উঠেছে।

জাতীয় বাজেট নিয়ে হতাশা

বুধবার (১৮ জুন) রাজধানীর গুলশান (Gulshan) এলাকার লেকশোর হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬: অবহেলিতরা কী পেয়েছে’ শীর্ষক সংলাপে এ মন্তব্য করেন ড. দেবপ্রিয়। সংলাপটি আয়োজন করে সিটিজেন প্লাটফর্ম ফর এসডিজি (Citizen Platform for SDGs)।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, “বাজেটে অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়নের কোনো রূপ দেখতে পাচ্ছি না। এটি এখন একটি হতাশাজনক বাজেট। সরকারটি সাধারণ নয়, তারপরও বাজেটটি অতিপরিচিত এবং পূর্ববর্তী ধাঁচেই তৈরি করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “৫ আগস্টের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট এবং পরবর্তী পরিস্থিতিতে যে প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল, তা বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর দাবি-দাওয়া বাজেটে উপেক্ষিত থেকে গেছে।”

সামাজিক নিরাপত্তা সংকুচিত

সংলাপে বক্তব্য রাখেন সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান (Dr. Mustafizur Rahman)। তিনি বলেন, “এই বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে সংকুচিত করা হয়েছে। এর প্রভাব শুধু চলতি অর্থবছরেই নয়, আগামী অর্থবছরেও বাজেট বাস্তবায়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “বয়স্ক ভাতা মাত্র ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা করা হয়েছে, অথচ মূল্যস্ফীতি অনুযায়ী এর প্রকৃত দরকার ছিল ৯০০ টাকা। ফলে প্রকৃত অর্থে সামাজিক নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক সংকুচিত হয়েছে। ভবিষ্যতে যারা বাজেট প্রণয়ন করবে, তাদের পক্ষে এই খাতের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা কঠিন হবে।”

বাজেটে বড় কোনো সংস্কার নেই

সংলাপের শুরুতে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) (SANEM)–এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান (Dr. Selim Raihan) বলেন, “এই বাজেটকে একটি ‘মিসড অপরচুনিটিস’ বা সুযোগ হারানোর বাজেট বলা যায়। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে।”

তিনি উল্লেখ করেন, “বাজেটের কাঠামো পুরোনো। এর মধ্যেই নতুন কিছু দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু তা বাস্তবসম্মত নয়। শুধু অভ্যন্তরীণ নয়, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তাও রয়েছে, কিন্তু বাজেটে এর প্রতিফলন নেই।”

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ অপ্রতুল

ড. সেলিম রায়হান আরও বলেন, “শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে যেসব বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। বাজেটে ভিন্ন কিছু করার সুযোগ ছিল, কিন্তু তা যথাযথভাবে কাজে লাগানো হয়নি।”