কুড়িগ্রাম (Kurigram) জেলার চিলমারী (Chilmari) উপজেলায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল (Bangladesh Jatiyatabadi Muktijoddha Dal)-এর কর্মীসভায় আওয়ামী লীগ নেতাদের উপস্থিতিকে ঘিরে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। গত মঙ্গলবার (১৭ জুন) অনুষ্ঠিত সভার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা মহলে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়।
কর্মীসভায় আওয়ামী লীগ নেতাদের উপস্থিতি
উপজেলা জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যে আয়োজিত এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগ (Awami League)-এর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম (Abdur Rahim) এবং দপ্তর সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর রহমান (Mozzafar Rahman)।
তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ (Kurigram District Awami League) সভাপতি আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মণ্ডল এবং সাধারণ সম্পাদক জাফর আলীর অনুমোদনে চিলমারী উপজেলা বিএনপির কমিটিতে এই দুই আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ও দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।
নতুন কমিটিতে বিতর্কিত অন্তর্ভুক্তি
একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, এ বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিমকে উপজেলা জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আহ্বায়ক এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই সর্দার মিলনকে সদস্য সচিব হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।
জেলা নেতৃবৃন্দের অবস্থান
তবে, আওয়ামী লীগ নেতাদের উপস্থিতির কথা স্বীকার করলেও নতুন কমিটির অস্তিত্ব অস্বীকার করেছেন জেলা জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপি (District BNP)-র সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারী সরকার (Abdul Bari Sarkar)। তিনি বলেন, “সবাইকে মুখে মুখে ডাকা হয়েছে। আওয়ামী লীগের দুজন মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন, তবে কমিটিতে রাখার প্রশ্নই আসে না।”
সভার প্রধান অতিথি ও বক্তারা
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম সরকার। প্রধান অতিথি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারী সরকার। বক্তব্য রাখেন জেলা জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: নুরুজ্জামান মিয়া (Nuruzzaman Mia), উলিপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের আহ্বায়ক আফতাব উদ্দিন মন্ডল, চিলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর রহমান এবং জেলা জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কার্যকরী সদস্য হোসেন আলী।
অতীত বিরোধ এবং অডিও ফাঁস
সম্প্রতি বিএনপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারী সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি থানাহাট ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি রাজু মিয়াকে শাসিয়েছেন চিলমারীর এক যুবদল নেতার বাড়িতে মাছ দেয়ার অভিযোগে। এই বিষয়ে ২ মিনিট ২ সেকেন্ডের একটি অডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
ক্ষোভ প্রকাশ
চিলমারী সরকারি ডিগ্রি কলেজ (Chilmari Govt Degree College)-এর সাবেক অধ্যক্ষ ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন সরকার বলেন, “আমরা যারা দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের শাসনে নির্যাতিত, অথচ এই সভায় আমাদের ডাক না দিয়ে আওয়ামী লীগের পদধারী মুক্তিযোদ্ধাদের ডাকা হয়েছে। বিষয়টি জেলা নেতৃবৃন্দকে জানিয়েছি।”
জেলা জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান মিয়া জানান, “আওয়ামীপন্থী কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন এবং আব্দুর রহিমের নাম কমিটিতে উত্থাপন করা হয়। আমরা বিষয়টি বুঝে সভা ত্যাগ করি।”