২০২৪ সালের শেষে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ ৩৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে, যা টাকার অঙ্কে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পেছনে কারা থাকতে পারেন, তা নিয়ে ধারণা দিয়েছেন বিশিষ্ট অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের (Zulkarnain Sayer)।
সুইস ব্যাংকে আমানত বৃদ্ধির পরিসংখ্যান
সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালের শেষে বাংলাদেশিদের সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯ কোটি ৮২ লাখ সুইস ফ্রাঁ। প্রতি ফ্রাঁ ১৫০ টাকা ধরে হিসাব করলে এর পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা। অথচ ২০২৩ সালের শেষে এই অঙ্ক ছিল মাত্র ২ কোটি ৬৪ লাখ ফ্রাঁ, যা টাকার অঙ্কে প্রায় ৩৯৬ কোটি টাকা।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকের ফেসবুক পোস্ট
শনিবার বিষয়টি নিয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট পোস্ট করেন জুলকারনাইন সায়ের (Zulkarnain Sayer)। সেখানে তিনি লিখেছেন, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমা বেড়ে যাওয়ার পেছনে থাকতে পারে বিদেশে অর্থ পাচারকারী রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ী শ্রেণি।
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “আপনাদের কি মনে হচ্ছে এই টাকা ইউনূস সরকার (Yunus Sarkar)–এর উপদেষ্টারা, বর্তমানে হালে বাতাস পাওয়া আমলা, রাজনীতিবিদ ও ছাত্রনেতারা বিদেশে পাচার করেছেন?” তিনি বিষয়টির সত্যতা নিয়ে যাচ্ছেন না বলে স্পষ্ট করেছেন, তবে ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ (Awami League)–এর সংসদ সদস্যদের হঠাৎ নিখোঁজ হওয়া ও গত ১৫ বছরে তাদের উপার্জিত সম্পদের গন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
সাবেক আইনমন্ত্রীর উদাহরণ
জুলকারনাইন সায়ের (Zulkarnain Sayer) উদাহরণ দেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক (Anisul Haque)–এর। তিনি বলেন, “ধরে নিই তিনি সিঙ্গাপুর (Singapore) ও দুবাই (Dubai)য়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ২০-৩০ মিলিয়ন ডলার সুইস পোর্টফোলিওতে স্থানান্তর করেন—তাহলে কি তার ডিপোজিট বাড়বে না?”
এমন দাবির ভিত্তি হিসেবে তিনি একটি ডকুমেন্টের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে, সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান (Salman F Rahman)–এর পুত্র শায়ান রহমান (Shayan Rahman)–কে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড বা প্রায় ৪০ কোটি টাকা বার্ষিক ৪ শতাংশ হারে ঋণ দিচ্ছেন।
অর্থ পাচার নিয়ে সম্ভাব্য ব্যাখ্যা
জুলকারনাইন সায়ের আরও বলেন, রাজনৈতিকভাবে অনিশ্চিত সময়ে যারা দেশ ছেড়েছেন বা দেশে থেকেই ঘাপটি মেরে আছেন, তারা তাদের অর্থ বিভিন্ন দেশে সরিয়ে নিচ্ছেন। সে কারণে সুইস ব্যাংকে হঠাৎ করে আমানত বেড়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।
তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “আমি বলছি না যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংশ্লিষ্টরা দুধে ধোয়া তুলসীপাতা, কিংবা ছাত্রনেতারা ফেরেশতা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিদেশে টাকা পাঠানোর প্রবণতা বেড়েছে।”