বিগত তিন জাতীয় নির্বাচনের নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে মামলা করবে বিএনপি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) (Bangladesh Nationalist Party) বিগত দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্বপালনকারী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য কমিশনারদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মামলার উদ্যোগ

শনিবার (২১ জুন) বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমকে জানান, বিএনপির পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আগামীকাল রবিবার (২২ জুন) সকালেই শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করতে যাবে।

তদন্ত চেয়ে নির্দেশ

এর আগে সোমবার (১৬ জুন) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বিগত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনের আয়োজনকারী সাবেক সিইসি, নির্বাচন কমিশনার এবং কমিশন সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৪

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন-এ বিএনপি ও অধিকাংশ দল নির্বাচন বর্জন করায় আওয়ামী লীগ এবং তাদের মিত্ররা অংশ নেয়। ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয় প্রার্থীরা, যা ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করে। বিএনপির অভিযোগ ছিল, এই নির্বাচনে কুকুর ভোটকেন্দ্রে গেলেও মানুষ যায়নি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে “দিনের ভোট রাতে” দেয়ার অভিযোগ তোলে বিএনপি। ইসলামপন্থী দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রথমে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিলেও দুপুরে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ২২ জন প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীকে অংশ নিলেও নির্বাচনের দিন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। এছাড়া সালমা ইসলাম, বিজেপির আন্দালিব রহমান নির্বাচন বর্জন করেন।

এই নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন কে এম নুরুল হুদা। তার সঙ্গে কমিশনার হিসেবে ছিলেন রফিকুল ইসলাম, মাহবুব তালুকদার, কবিতা খানম এবং শাহাদাত হোসেন চৌধুরী

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। দলটি অভিযোগ করে, “আমি, তুমি আর ডামি” নির্বাচনের মধ্য দিয়েই নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এই নির্বাচনে সিইসি ছিলেন কাজী হাবিবুল আউয়াল, আর কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মো. আলমগীর, আনিছুর রহমান, বেগম রাশিদা সুলতানাব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান

বিএনপির অভিযোগ, বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সেনা মোতায়েনের দাবি উপেক্ষা করেছে। ফলে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ একতরফাভাবে নির্বাচন করে এবং নির্বাচন কমিশন তা সহযোগিতা করেছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র ও জনতার আন্দোলনের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান।

এরপর থেকেই বিএনপি ধারাবাহিকভাবে তিনটি নির্বাচনে দায়িত্বপালনকারী কমিশনারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছিল। এবার সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে দলটি।