মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ (Mahathir Mohamad) বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। শততম জন্মবার্ষিকী সামনে রেখে আইটিভি (ITV)-কে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) সরকারকে সরাতে যেই ঐক্য গঠিত হয়েছিল, এখন আর তা নেই।” এ সময় তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)-এর প্রশংসাও করেন।
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিয়ে সন্দেহ
মাহাথির মোহাম্মদ মনে করেন, “মানুষ শেখ হাসিনাকে সরাতে ঐক্যবদ্ধ ছিল, কিন্তু কী ধরনের সরকার চায়, তা নিয়ে মতৈক্য ছিল না। এখন সেই লোকজনের মধ্যেই দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “গণতন্ত্রে মানুষ সবসময় সেরা লোকটাকেই বেছে নেয় না, অনেক সময় ভুল লোককেও বেছে নেয়। তবে যদি বাংলাদেশের মানুষ চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তারা ভালো সরকার বেছে নিতে পারবে।”
ইউনূসের প্রশংসা, তবে আসিয়ান সদস্যপদে অনিশ্চয়তা
ড. ইউনূস-এর কাজের ভূয়সী প্রশংসা করে মাহাথির বলেন, “তিনি ক্ষমতার লোভ করেননি, শুধু দরিদ্রদের জন্য কাজ করেছেন।” তবে তাকে আসিয়ান (ASEAN)-এর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের যোগদান বিষয়ে আশাবাদী নন মাহাথির।
তিনি বলেন, “ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ আসিয়ানের সীমানার বাইরে। আমাদের তো একটি ভৌগোলিক সীমা মেনে চলতে হবে, না হলে আসিয়ান দ্বিতীয় জাতিসংঘ হয়ে যাবে।” তবে তিনি বাংলাদেশকে ‘অবজারভার’ বা ‘ডায়ালগ পার্টনার’ হিসেবে দেখার সম্ভাবনার কথা বলেন।
রোহিঙ্গা সংকটে মালয়েশিয়ার অবস্থান
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মালয়েশিয়া (Malaysia)-র সীমিত ভূমিকা নিয়েও মন্তব্য করেন মাহাথির। তিনি বলেন, “আমরা যথেষ্ট করেছি। মিয়ানমারকে বোঝাতে চেয়েছি, পারিনি। এখন অন্যদের এগিয়ে আসার সময়।”
বাংলাদেশকে আরও দায়িত্ব নিতে হবে কিনা—এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ মিয়ানমারের পাশেই, তাই স্বাভাবিকভাবেই কাছের দেশ হিসেবে লোকজন সেদিকেই যাবে।”
জাপানে ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ
জাপানে মাহাথির ও ইউনূসের সাম্প্রতিক সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি তার কথা শুনেছি, জানি সে সমস্যায় আছে। তবে বাংলাদেশ কিভাবে চলবে, তা বলার যোগ্যতা আমার নেই।”
এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে স্পষ্ট যে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতিতে বর্ষীয়ান এই নেতা এখনও সক্রিয় পর্যবেক্ষক এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি সম্পর্কেও তার গভীর মনোযোগ রয়েছে।