ড. ইউনূস-স্টারমার বৈঠক ভণ্ডুলে ব্রিটেনে ৮০ এমপির তৎপরতা, নেতৃত্বে ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক

ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus)ের ইংল্যান্ড সফরের সময় তার সঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার (Keir Starmer)র সম্ভাব্য বৈঠক শেষ পর্যন্ত আর হয়নি। মূলত, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ (Awami League)র ব্রিটেন শাখার সক্রিয় তৎপরতায় এই বৈঠকটি আটকে যায়।

স্টারমারের সঙ্গে বৈঠক ঠেকাতে সক্রিয় আওয়ামী নেতারা

১০ থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত ড. ইউনূস ব্রিটেনে অবস্থানকালে তিনি একাধিক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন। সম্ভাব্য তালিকায় ছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও। তবে সূত্র বলছে, ভারতে পলাতক শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)র পক্ষ থেকে নির্দেশ ছিল যেকোনো মূল্যে এ বৈঠক ঠেকাতে হবে।

টিউলিপ সিদ্দিকের প্রভাব ও ৮০ এমপির ভূমিকা

অনুসন্ধানে জানা যায়, টিউলিপ সিদ্দিক (Tulip Siddiq), যিনি লেবার পার্টি (Labour Party)র প্রভাবশালী এমপি এবং শেখ হাসিনার ভাগ্নি, তিনিই প্রধান ভূমিকা পালন করেন। যদিও তিনি কিছুটা কোণঠাসা হয়ে মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন, তবুও তার রাজনৈতিক প্রভাব তিনি কাজে লাগান। তার নেতৃত্বে অন্তত ৮০ জন ব্রিটিশ এমপি এ বৈঠক ঠেকাতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় আওয়ামী চক্র

সূত্র বলছে, ব্রিটেনের প্রায় সব এলাকার স্থানীয় রাজনীতিতে যুক্ত আছেন আওয়ামী ঘরানার প্রবাসীরা। তারা নিজের এলাকায় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে ওই এমপিদের এই ষড়যন্ত্রে যুক্ত করে। শেষ পর্যন্ত স্টারমারের ঘনিষ্ঠ ৪ সংসদ সদস্য একসঙ্গে তার সঙ্গে দেখা করে বৈঠক না করার অনুরোধ জানান এবং তিনি তাতে সম্মত হন।

দুর্নীতিবাজদের অর্থ ফেরত আনাই ছিল উদ্দেশ্য

ড. ইউনূসের সফরসঙ্গী ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশন (Anti-Corruption Commission) চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংক (Bangladesh Bank) গভর্নর। লক্ষ্য ছিল, দুর্নীতির মাধ্যমে ইংল্যান্ড (England)ে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার পথ খুঁজে বের করা।

এই বৈঠকটি হলে দু’দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের সমঝোতা তৈরি হতো, যা টাকা ফেরত আনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের বিলাসবহুল জীবন

প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রিটেনে পলাতক আছেন আওয়ামী লীগ সরকারের ৪ জন সাবেক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীসহ বহু এমপি। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী (Saifuzzaman Chowdhury) যিনি একাই ব্রিটেনে সাড়ে ৩শ’র বেশি বাড়ির মালিক। ব্রিটিশ সরকার তার বেশ কিছু সম্পত্তি ইতিমধ্যে জব্দ করেছে।

একইভাবে, সালমান এফ রহমান (Salman F Rahman)–এর ছেলের বেশ কিছু বিলাসবহুল বাড়িও জব্দ করেছে ব্রিটিশ প্রশাসন। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত এখনও চলছে।

উপসংহার

এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে, কীভাবে একটি রাজনৈতিক চক্র শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের দুর্নীতিবিরোধী সংগ্রাম এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা।