জিএম কাদেরকে বাদ দিয়ে নতুন নেতৃত্বে আসছে জাতীয় পার্টি, সম্মেলনে এক ছাতার নিচে একত্রিত হচ্ছেন রওশনপন্থীরা

সপ্তমবারের মতো ভাঙনের মুখে পড়েছে প্রয়াত স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ (Hussain Muhammad Ershad) প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি (Jatiya Party)। গঠনতন্ত্রের বিতর্কিত ২০(ক) ধারা ঘিরে ফের দলের মধ্যে বিভাজন দেখা দিয়েছে। একপক্ষের নেতৃত্বে ২৮ জুন ঢাকার কাকরাইলে সম্মেলনের মাধ্যমে জিএম কাদেরকে বাদ দিয়ে নতুন নেতৃত্ব গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বিতর্কিত ২০(ক) ধারা ও সম্মেলন

দলের গঠনতন্ত্রের ২০(ক) ধারা অনুযায়ী, চেয়ারম্যান কারণ দর্শানো ছাড়াই যে কাউকে পদচ্যুত বা বহিষ্কার করতে পারেন। এ ধারা সংশোধনের আহ্বান জানালেও জিএম কাদের (GM Quader) তা মানেননি। ফলে ভীতি ও অনিশ্চয়তা থেকে বের হয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ (Anisul Islam Mahmud) ও রুহুল আমিন হাওলাদার (Ruhul Amin Howlader)–এর নেতৃত্বে ২৮ জুন সম্মেলনের উদ্যোগ নেয়া হয়।

জিএম কাদের যদিও সম্মেলন স্থগিতের ঘোষণা দেন, কো-চেয়ারম্যানরা বলছেন এটি একক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। সিদ্ধান্ত হয়েছিল, প্রয়োজনে কাকরাইল (Kakrail) কার্যালয়ের সামনেই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আনিসুল ইসলাম বলেন, “উনি একা সম্মেলন বাতিল করতে পারেন না, প্রেসিডিয়ামের সিদ্ধান্তে হয়েছিল।”

জিএম কাদেরপন্থিদের অভিযোগ: সরকারের ইন্ধন

জিএম কাদেরপন্থিরা মনে করছেন, সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে এ বিভাজনের পেছনে। কারণ, ২০১৯ সালের পর আর সম্মেলন হয়নি। নির্বাচন কমিশন থেকে চাপ এলে জিএম কাদের সম্মেলনের প্রস্তুতি নিলেও বাধা পায় স্থান সংকটে। তাদের দাবি, ১৬-১৭ বছর ধরে বিএনপির সম্মেলন না হলেও ইসির পক্ষ থেকে কোনো চাপ নেই, যা সরকারের পক্ষপাতিত্ব প্রমাণ করে।

মুখোমুখি অবস্থান ও চুন্নুর ভূমিকা

দলের বর্তমান মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু (Mujibul Haque Chunnu) শুরুতে জিএম কাদেরপন্থি থাকলেও এখন বিদ্রোহী পক্ষের ঘনিষ্ঠ বলে বিবেচিত। চুন্নু বলেন, “২০(ক) ধারা স্বৈরশাসনের প্রতীক, গণতন্ত্র নয়।” তিনি জানান, তিনিও ধারা সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন এবং কাদের সাহেব তা মানেননি।

বৃহত্তর ঐক্য গড়ার প্রচেষ্টা

বিদ্রোহী অংশটি রওশন এরশাদ (Raushon Ershad)–সহ অতীতে বিভক্ত হয়ে যাওয়া জাতীয় পার্টির অংশগুলোকে একত্রিত করে সম্মেলনে যুক্ত করার চেষ্টা করছে। আলোচনায় রয়েছে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (Anwar Hossain Manju), শেখ শহীদুল ইসলাম (Sheikh Shahidul Islam) ও এম এ মতিন (MA Matin)–এর জাতীয় পার্টিগুলোর নেতারা।

সৈয়দ আবুল হোসেন বাবলা (Syed Abul Hossain Babla) বলেন, “আমরা বৃহত্তর ঐক্য চাই। গণতান্ত্রিক সম্মেলন হলে আমরা যাব।”

গৃহযুদ্ধের মধ্যে চিঠি ও সতর্কতা

জিএম কাদের ২৮ জুনের সম্মেলনকে অগ্রহণযোগ্য ঘোষণা করে জেলা ও উপজেলা নেতাদের চিঠি দিয়েছেন যাতে তারা অংশ না নেন। বিশেষভাবে রংপুর (Rangpur) অঞ্চলের নেতাদের অংশগ্রহণ ঠেকাতে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।

শামীম হায়দার পাটোয়ারী (Shamim Haider Patwary) বলেন, “২৮ তারিখের সম্মেলন হলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে। এর চেয়ে সম্মেলন স্থগিত থাকাই উত্তম।”

সর্বাধিক বিভক্ত রাজনৈতিক দল

এখন পর্যন্ত ‘জাতীয় পার্টি’ নামে সাতটি দলের অস্তিত্ব রয়েছে। এর মধ্যে কিছু দলের নেতৃত্বে রয়েছেন এরশাদের পরিবার– সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক (Bidisha Siddique), রওশন এরশাদ, এবং ভাই জিএম কাদের।

বিদ্যমান বিভক্ত দলগুলোর মধ্যে রয়েছে:
– জাতীয় পার্টি (জিএম কাদের)
– নতুন জাপা (বিদিশা)
– জাতীয় পার্টি (জেপি)– আনোয়ার হোসেন মঞ্জু
– বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)– আন্দালিব রহমান পার্থ
– জাতীয় পার্টি– কাজী জাফর আহমদ
– বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি– ডা. এম এ মুকিত
– জাতীয় পার্টি– রওশন এরশাদ

এই বাস্তবতায়, ২৮ জুন অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলন জাতীয় পার্টির নতুন দিক নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ মোড় হতে যাচ্ছে।