২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ড (Pilkhana Massacre) নিয়ে গঠিত জাতীয় স্বাধীন অনুসন্ধান কমিশন তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদনে তৎকালীন সামরিক নেতৃত্বের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ‘গভীর ব্যর্থতা’র দিকটি তুলে ধরেছে।
বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি (Science Laboratory) এলাকার এক নতুন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারম্যান ও বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এ এল এম ফজলুর রহমান (Maj Gen (Retd) A.L.M. Fazlur Rahman) এ তথ্য জানান।
সামরিক ও গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতা
ফজলুর রহমান বলেন, “সেনাবাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব অপরাধ প্রতিরোধে সময়মতো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।” তিনি অভিযোগ করেন, “ঘটনার সময় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো চূড়ান্ত অবহেলা ও অদক্ষতা দেখিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ঘটনার দিন সামরিক হস্তক্ষেপ হলে এই হত্যাকাণ্ড এড়ানো যেত।”
পটভূমি ও বিচার প্রক্রিয়া
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর সদর দপ্তরে সংঘটিত এই বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। সে সময় আওয়ামী লীগ (Awami League) সরকার ক্ষমতায় ছিল মাত্র দুই মাস।
ঘটনার পর সীমান্তরক্ষা বাহিনীর নাম পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) (Border Guard Bangladesh – BGB) রাখা হয় এবং বাহিনীর পোশাকেও পরিবর্তন আনা হয়।
বিচার প্রক্রিয়ায় বিজিবি নিজস্ব আদালতে বিদ্রোহের বিচার করে, আর গণহত্যার বিচার হয় ফৌজদারি আদালতে।
– ২০১৩ সালে রায় ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন, ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড, ২৭৮ জন খালাস
– হাইকোর্টে আপিল রায়:** ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল, ১৮৫ জনের যাবজ্জীবন, ২২৮ জনের বিভিন্ন সাজা, ২৮৩ জন খালাস
পুরনো কমিটির ব্যর্থতা ও বিভ্রান্তি
ফজলুর রহমান অভিযোগ করেন, “পূর্ববর্তী দুটি অনুসন্ধান কমিটি ঘটনাটি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছে। জঙ্গিবাদ ইস্যুকে সামনে এনে মূল তদন্তকে দূরে সরানোর চেষ্টা হয়েছে।”
বিদেশি সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত
তিনি জানান, কিছু ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যে বিদেশি হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত রয়েছে। তদন্তে পাওয়া এসব তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে।
সাক্ষ্যগ্রহণ ও পরবর্তী পদক্ষেপ
কমিশন এ পর্যন্ত ১৫৮ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন:
– ১৫ জন সেনা কর্মকর্তা (ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া)
– ৮ জন রাজনীতিবিদ (৩ জন কারাগারে, ৩ জন সরাসরি, ২ জন অনলাইনে)
– অনলাইনে বক্তব্য দেওয়া: মির্জা আজম (Mirza Azam), জাহাঙ্গীর কবির নানক (Jahangir Kabir Nanak)
আরও ৫০ সেনা কর্মকর্তাকে লিখিত বক্তব্য দিতে অনুরোধ জানিয়ে সেনা সদর থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা বৃদ্ধি চাওয়া
কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়াতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এখনও সাক্ষ্য নেওয়া বাকি আছে শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)সহ আরও অন্তত ৫০ জনের।