শেখ মুজিবও ক্ষমতার লোভ সামলাতে পারেননি: আদালতে সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়ালের মন্তব্য

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (Kazi Habibul Awal) রাষ্ট্রদ্রোহ ও প্রহসনের নির্বাচনের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন এবং বলেছেন, “ক্ষমতার লোভ শেখ মুজিবও সামলাতে পারেননি।” বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ঢাকা (Dhaka) চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রিমান্ড শুনানিতে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

আদালতে উত্তপ্ত পরিবেশ

শেরে বাংলা নগর থানা (Sher-e-Bangla Nagar Police Station) মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া হাবিবুল আউয়ালকে দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার তার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী (Omar Faruq Faruqi)।

ওমর ফারুক বলেন, হাবিবুল আউয়ালের আমলে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল একতরফা ও লোক দেখানো। তিনি নিজেই স্বীকার করেন, “কেউ নির্বাচনে না এলে আমি কি বসে থাকবো?” তিনি ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে চলে যান, যা তার অন্যায়ের প্রমাণ।

নিজের অবস্থান ব্যাখ্যায় আউয়াল

আসামিপক্ষের আইনজীবী এমিল হাসান রুমেল রিমান্ড বাতিলের আবেদন করে বলেন, তার বয়স ৭০ এবং তিনি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। আদালতের অনুমতি নিয়ে আউয়াল বলেন, “নির্বাচন কমিশন দুর্বল, মৌলিক সংস্কার ছাড়া আগামী এক হাজার বছরেও এদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।” তিনি আরও বলেন, “ক্ষমতার লোভ এমন একটি বিষয়, যা শেখ মুজিবও সামলাতে পারেননি।”

বিচারকের প্রশ্ন ও উত্তপ্ত প্রতিক্রিয়া

বিচারক মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রশ্ন করেন, ইনকোয়ারি কমিটিগুলো সরেজমিনে তদন্ত করেছে কিনা। আউয়াল জানান, নির্বাচন পরিচালনায় মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বেশি ভূমিকা পালন করেন। বিচারক জানতে চান, আপনি নির্বাচন পরিস্থিতি জেনে পদত্যাগ করলেন না কেন? জবাবে আউয়াল বলেন, “আমি যদি জানতাম এমন ভয়াবহ নির্বাচন হবে, তাহলে দায়িত্বই নিতাম না।”

বিচারক ইনকোয়ারি কমিটির ভাতা ২২ হাজার থেকে ৫ লাখে উন্নীত করার বিষয়ে প্রশ্ন করলে আউয়াল বলেন, হয়তো মুদ্রাস্ফীতির কারণে এমনটা হয়েছে।

উত্তপ্ত পরিবেশ ও রিমান্ড আদেশ

আদালতের শুনানির একপর্যায়ে আউয়াল বলেন, “জাস্টিফাই না করতে দিলে রিভলবার দিয়ে গুলি করে মেরে ফেলেন।” এই মন্তব্যে এজলাস উত্তপ্ত হয়ে উঠে। শুনানি শেষে আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার পটভূমি

বিএনপি (BNP) জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. সালাহউদ্দিন খান ২২ জুন শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করেন। এতে আওয়ামী লীগ (Awami League) সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম, গুম, খুন, ভয়ভীতি ও গায়েবি মামলার অভিযোগ আনা হয়।

মামলার অন্যান্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina), তিন সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার (Hassan Mahmud Khandker), এ কে এম শহীদুল হক (A K M Shahidul Hoque), জাবেদ পাটোয়ারী (Javed Patwary), বেনজির আহমেদ (Benazir Ahmed) এবং চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন (Chowdhury Abdullah Al-Mamun)।

২৫ জুন মগবাজার থেকে হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ধারা যুক্ত করা হয়।